৩২৬
আমি মুমিনের ‘ইয়াসুব’ আর সম্পদ দুষ্টদের‘ ইয়াসুব’।
৩২৭
কয়েকজন ইহুদি আলীকে বললো, ‘তোমাদের নবীকে কবরস্থ করতে না করতেই তোমরা তার সম্পর্কে মতভেদ করছো।’
আলী প্রত্যুত্তরে বললেন, তার সম্পর্কে আমাদের কোন মতদ্বৈধতা নেই। মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হয়েছে তাঁর পরে তাঁর উত্তরাধিকার ও স্থলাভিসিক্তের ব্যাপারে। অপরপক্ষে নীলনদ পার হয়ে পায়ের পানি না শুকাতেই তোমরা তোমাদের নবীকে বলেছো, ‘এদের যেমন ঈশ্বর আছে আমাদের জন্য সেরূপ একটি ঈশ্বর তৈরি কর। তিনি বললেন নিশ্চয়ই তোমরা অজ্ঞ লোকের মতো আচরণ কর।’ (কোরান ৭:১৩৮)
৩২৮
এক ব্যক্তি আলীকে বললো, কিসের দ্বারা আপনি আপনার প্রতিপক্ষকে পরাভূত করেন। তিনি বললো, যখনই আমি শক্রর মোকাবেলা করি তখন সে নিজেই তার বিরুদ্ধে আমাকে সহায়তা করে।
৩২৯
আলী তাঁর পুত্র মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়াকে বলেছিলেন, ‘হে আমার পুত্র! আমার ভয় হয় পাছে দারিদ্র তোমাকে পাকড়াও করে। সুতরাং এ থেকে রক্ষা পাবার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। কারণ দারিদ্র হলো দ্বীনি ইমানের স্বল্পতা, বুদ্ধির বিহ্বলতা এবং তা একগুয়ে লোকের ঘৃণার উদ্রেক করে।
৩৩০
এক ব্যক্তি আলীকে নানা ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, বুঝার জন্য আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করো-সংশয় সৃষ্টির জন্য নয়। মনে রেখো, যে অজ্ঞ ব্যক্তি শিখতে চায় সে শিক্ষিত লোকের মতো। অপরপক্ষে যে শিক্ষিত ব্যক্তি সংশয় সৃষ্টি করতে চায় সে অজ্ঞের চেয়েও অধম।
৩৩১
একবার আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস আলীর অভিমতের বিরুদ্ধে তাকে উপদেশ দিলে তিনি বললেন, ‘তুমি শুধু আমাকে উপদেশ দিতে পার আমি ভেবে দেখবো কী করা যায়। যদি আমি তোমার উপদেশ অনুযায়ী কাজ না করি তবে তোমার উচিত হবে আমাকে অনুসরণ করা।’
৩৩২
সিফফিন থেকে কুফায় ফেরার পথে আলী যখন শিবাম গোত্রের এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সিফফিনে নিহতদের জন্য নারীর কান্না শুনতে পেলেন। এ সময় শিবাম গোত্রের নেতা হারব ইবনে সুরাহবিল আশ-শিবামী আলীর কাছে এলে তিনি বললেন-
‘তোমাদের নারীরা কি তোমাদের নিয়ন্ত্রণ করে? এভাবে চিৎকার করা থেকে তোমরা কি তাদের নিবৃত্ত কর না?’ আলী ঘোড়ায় সওয়ার ছিলেন। হারব তাঁর সাথে হাঁটছিল।
আলী বললেন, ‘তুমি ফিরে যাও; কারণ তোমার মতো লোক আমার সঙ্গে হাঁটলে এটা শাসকের জন্য অমঙ্গল আর ইমানদারের জন্য অমর্যাদাকর।’
৩৩৩
নাহরাওয়ানের যুদ্ধের পর আলী খারিজিদের মৃতদেহের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বললেন, ‘তোমাদের ওপর আল্লাহর লানত, তোমরা সে লোক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছো যে তোমাদের প্রতারণা করেছে।’
এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, ‘হে আলী! কে তাদের প্রতারণা করেছে?’
তিনি বললেন, ‘শয়তান সেই প্রতারক। তাদের রিপু তাদেরকে কুপথে পরিচালনা করে কামনা-বাসনার মাধ্যমে এবং পাপে নিমজ্জিত হওয়াকে সহজ করে দেয়; তাদেরকে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু পরিণামে আগুনে নিক্ষেপ করে।’
৩৩৪
একাকীত্বে আল্লাহর অবাধ্য হওয়া সম্পর্কে সাবধান থেকো; কারণ যিনি একাকীত্বের সাক্ষী তিনিই বিচারক।
৩৩৫
যখন মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরের নিহত হওয়ার সংবাদ আলীের কাছে পৌঁছলো তখন তিনি বললেন, ‘তার মৃত্যুতে শত্রুরা যতটুকু আনন্দিত হয়েছে আমরা তার বহুগুণ বেশি শোকাহত হয়েছি। তাদের একজন শত্রু চলে গেল আর আমরা একজন বিশেষ বন্ধু হারালাম।’
৩৩৬
ষাট বছর বয়স পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের ওজর গ্রহণ করেন।
৩৩৭
পাপ যাকে পরাভূত করেছে সে বিজয়ী নয় এবং পাপের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করা প্রকৃতপক্ষে পরাভূত হওয়া।
৩৩৮
আল্লাহ দুঃখীজনের জীবিকা ধনীদের সম্পদের মাঝে রেখেছেন। ফলে, যখন কোন অভাবগ্রস্ত লোক উপোস থাকে তখন বুঝতে হবে কোন ধনী ব্যক্তি তার সম্পদে অভাবগ্রস্ত লোকটির হিস্যা অস্বীকার করেছে। মহিমান্বিত আল্লাহ ধনী লোকদের এজন্য একদিন জিজ্ঞেস করবেন।
৩৩৯
দায়িত্ব পালনে সত্য-সঠিক ওজর দেখানো অপেক্ষা ওজর না দেখানোর অবস্থা অনেক ভালো।
৩৪০
তোমাদের প্রতি আল্লাহর ন্যূনতম অধিকার হলো তোমরা তার নেয়ামতকে পাপ কাজে ব্যবহার করবে না।
৩৪১
কোন অসমর্থ ব্যক্তি যখন মহিমান্বিত আল্লাহর আনুগত্যের আমলসমূহ করতে না পারে তখন এটা পালন করা বুদ্ধিমানের একটা ভালো সুযোগ।
৩৪২
এ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রহরীরাই সার্বভৌম।
৩৪৩
মুমিন ব্যক্তির গুণাবলী সম্পর্কে আলী বললেন- সে ব্যক্তি ইমানদার যার মুখমণ্ডল আনন্দোৎফুল্ল, হৃদয় দুঃখ ভারাক্রান্ত, প্রশস্ত বক্ষ এবং বিনয়াবনত মন। সে উচ্চ মর্যাদাকে ঘৃণা করে এবং সুনাম পছন্দ করে না।
তার শোক স্থায়ী, তার সাহস সুদূর প্রসারী, তার নীরবতা অধিক, অধিক সময় সে ব্যস্ত। সে কৃতজ্ঞ, সহিষ্ণু, চিন্তায় মগ্ন, বন্ধুত্বে সংযমী আচরণে মধুর ও মেজাজে কোমল। সে পাথরের চেয়ে শক্ত কিন্তু ক্রীতদাস অপেক্ষাও বিনয়ী।
৩৪৪
যদি কোন ব্যক্তি জীবনের শেষ এবং তার শেষভাগ্য দেখতে পায় তখন সে কামনা-বাসনা ও এর বঞ্চনাকে ঘৃণা করতে শুরু করে।
৩৪৫
প্রত্যেক ব্যক্তির সম্পদে দুই ধরনের অংশীদার রয়েছে উত্তরাধিকারী ও আকস্মিক।
৩৪৬
কোন ব্যক্তিকে কোন বিষয়ে অনুরোধ করা হলে যে পর্যন্ত সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয় সে পর্যন্ত ওই বিষয়ে সে মুক্ত।
৩৪৭
যে ব্যক্তি প্রার্থনা করে। অথচ তাতে গভীর মনোনিবেশ করে না সে ওই ব্যক্তির মতো যে ছিলা বিহীন ধনুকে শার যোজনা করে।
৩৪৮
জ্ঞান দুই রকমের-আত্ম-ভূত জ্ঞান এবং শ্রুত-জ্ঞান। শ্রুত জ্ঞান আত্মভূত না হলে কোন উপকারে আসে না।
৩৪৯
সিদ্ধান্তের সঠিকতা কর্তৃত্বের ওপর নির্ভরশীল। কর্তৃত্ব থাকলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকে। কর্তৃত্ব না থাকলে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না।
৩৫০
দুস্থের শোভা হলো সততা আর ধনীর শোভা হলো কৃতজ্ঞতা।
(চলবে…)
…………………………….
সূত্র: নাহজ আল-বালাঘা
…………………………….
আরো পড়ুন:
মাওলা আলীর বাণী: ১
মাওলা আলীর বাণী: ২
মাওলা আলীর বাণী: ৩
মাওলা আলীর বাণী: ৪
মাওলা আলীর বাণী: ৫
মাওলা আলীর বাণী: ৬
মাওলা আলীর বাণী: ৭
মাওলা আলীর বাণী: ৮
মাওলা আলীর বাণী: ৯
মাওলা আলীর বাণী: ১০
মাওলা আলীর বাণী: ১১
মাওলা আলীর বাণী: ১২
মাওলা আলীর বাণী: ১৩
মাওলা আলীর বাণী: ১৪
মাওলা আলীর বাণী: ১৫
মাওলা আলীর বাণী: ১৬
মাওলা আলীর বাণী: ১৭
মাওলা আলীর বাণী: ১৮
মাওলা আলীর বাণী: ১৯
মাওলা আলীর বাণী: ২০