ভবঘুরেকথা

৪০১
দুনিয়া থেকে বিরত থেকো, যাতে আল্লাহ এর প্রকৃত কুফল তোমাকে দেখাতে পারেন। এ বিষয়ে অবহেলা করো না, কারণ তোমার কোন কর্মকাণ্ড অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হবে না।

৪০২
এমনভাবে কথা বলো যেন মানুষ তোমাকে জানতে পারে, কারণ মানুষের স্বরূপ জিহ্বার নিচে লুক্কায়িত।

৪০৩
এ দুনিয়ার যেটুকু আনুকূল্য তোমার কাছে আসে তা অপসৃত কর এবং তোমার কাছ থেকে যা দূরে থাকে তা থেকে বিরত থাক। যদি তা করতে না পার তবে তোমার চাহিদায় মধ্যপথ অবলম্বন কর।

৪০৪
এমন অনেক কথা আছে যা আক্রমণ থেকেও বেশি কার্যকর।

৪০৫
যাতে তৃপ্তি পাওয়া যায় তা অল্প হলেও যথেষ্ট।

৪০৬
অপমানিত হবার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। অন্যের মাধ্যম ব্যতীত ক্ষুদ্র জিনিসও উত্তম। যে বসে পায় না সে দাঁড়িয়েও পাবে না। এ পৃথিবীতে তোমাদের দুটি সময় হবে একটি তোমার পক্ষে অপরটি তোমার বিরুদ্ধে। সময় তোমার অনুকূলে থাকলে আত্মম্ভরী হয়ো না, আবার তোমার প্রতিকূলে গেলে ধৈর্য ধারণ করো।

৪০৭
সব চাইতে ভালো সুগন্ধি হলো কস্তুরী; এটা ওজনে হালকা ও সুগন্ধিতে ভরপুর।

৪০৮
দম্ভোক্তি পরিহার কর, আত্ম-প্রবঞ্চনা পরিত্যাগ করো এবং কবরকে স্মরণ করা।

৪০৯
পিতার ওপর পুত্রের যেমন অধিকার আছে, পুত্রের ওপরও পিতার তেমন অধিকার আছে। পিতার অধিকার হলো পুত্র শুধু আল্লাহকে অমান্য করার আদেশ ব্যতীত তাঁর সকল আদেশ মেনে চলবে এবং পুত্রের অধিকার হলো- পিতা তার একটা সুন্দর নাম রাখবে, তাকে উত্তম প্রশিক্ষণ দেবে এবং কোরান শিক্ষা দেবে।

৪১০
দৃষ্টির কু-প্রভাব সঠিক; যাদুমন্ত্র সঠিক; মায়াবিদ্যা সঠিক এবং ফাল (মঙ্গল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী) সঠিক; কিন্তু ‘তিয়ারাহ’ (মন্দ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী) সঠিক নয় এবং কারো রোগ অন্যের মধ্যে ছড়ানো সঠিক নয়। সুগন্ধি আনন্দ দেয়, মধু আনন্দ দেয়; ঘোড়ায় সওয়ারি হওয়া আনন্দ দেয় এবং সবুজ প্রান্তরের দিকে দৃষ্টি আনন্দ দেয়।

৪১১
জনগনের রীতি-নীতিতে তাদের নৈকট্য তাদেরকে পাপ থেকে নিরাপত্তা প্রদান করে।

৪১২
আলীর মর্যাদা সম্পর্কে কেউ একজন উক্তি করলে তিনি বললেন, ‘পলক গজাবার সাথে সাথে তুমি উড়তে শুরু করেছো এবং বয়ঃপ্রাপ্ত হবার আগেই বিড়বিড় শুরু করেছো।’

৪১৩
যে কেউ অসঙ্গত কিছুর জন্য লালায়িত হয় সে কৃতকার্য হবার পথ খুঁজে পায় না।

৪১৪
কেউ একজন ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’-এর অর্থ জিজ্ঞেস করলে আলী বললেন, ‘আমরা কোন কিছুতে আল্লাহর সমকক্ষ কর্তৃত্বশীল নই এবং আল্লাহ্ কর্তৃত্ব না দিলে আমরা কোন কিছুতেই কর্তৃত্বশীল নই।

সুতরাং যখন তিনি কোন কিছুতে আমাদেরকে কর্তৃত্ব প্রদান করেন তখন তিনি আমাদের ওপরও উধ্বতন কর্তৃত্বশীল থাকেন। এ সময় তিনি আমাদেরকে কিছু দায়িত্বও দিয়ে থাকেন। যখন তিনি কর্তৃত্ব প্রত্যাহার করেন তখন তিনি দায়িত্বও প্রত্যাহার করেন।

৪১৫
আম্মার ইবনে ইয়াসিরকে মুঘিরা ইবনে শুবাহ-এর সাথে তর্ক-বিতর্ক করতে দেখে আলী বললেন,’হে আম্মার! ওকে ছেড়ে দাও; ওর সঙ্গে তর্ক করো না; কারণ এ দুনিয়ার সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য সে ইসলামে প্রবেশ করেছে এবং সে স্বেচ্ছায় নিজেকে সংশয়ে নিপতিত করেছে যাতে সে নিজের দোষ ঢাকতে পারে।’

৪১৬
আল্লাহ কর্তৃক পুরস্কৃত হবার জন্য দরিদ্রের সম্মুখে ধনীদের নম্রতা প্রদর্শন করাই উত্তম; কিন্তু আল্লাহতে বিশ্বাসের বিষয়ে ধনীদের প্রতি দরিদ্রের প্রগলভতা তদপেক্ষাও ভালো।

৪১৭
আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে প্রজ্ঞা প্রদান করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাকে প্রজ্ঞা দ্বারা ধ্বংস থেকে রক্ষা না করেন।

৪১৮
যে কেউ সত্যের সাথে বিরোধ করে সে সত্য দ্বারাই পরাভূত হয়।

৪১৯
হৃদয় হলে চোখের গ্রন্থ।

৪২০
আল্লাহর ভয় মানুষের চরিত্রের সব চেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।

৪২১
যিনি তোমাকে কথা বলার ক্ষমতা প্রদান করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলে তোমার বাকপটুতা দেখিয়ো না।

অথবা যিনি তোমাকে সত্য পথে রেখেছেন তার বিরুদ্ধে বাগ্মীতা ঝেড়ো না।

৪২২
নিজের শৃঙ্খলা বিধানের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তুমি অন্যের যা অপছন্দ কর তা থেকে নিজকে বিরত রাখা।

৪২৩
বিজ্ঞদের মতো ধৈর্য ধারণ করতে হবে, না হয় অজ্ঞদের মতো চুপ করে থাকতে হবে।

৪২৪
আলী দুনিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘এটা প্রতারণা করে, এটা ক্ষতি করে এবং এটার পরিসমাপ্তি ঘটে। আল্লাহ তাঁর প্রেমিকদের জন্য পুরস্কার হিসাবে এটাকে অনুমোদন করেন না। বস্তুত দুনিয়াবাসীরা এখানে সওয়ারির মতো, যত শীঘ্র সম্ভব নামিয়ে দিয়ে বাহন চলে যায়।

৪২৫
আলী তাঁর পুত্র হাসানকে বলেছিলেন, ‘হে পুত্র! তোমার পরে এ পৃথিবীতে কোন কিছু জমিয়ে রেখে যেয়ো না। কারণ তোমার জমানো জিনিস দুধরনের লোক ভোগ করতে পারে-

১. আল্লাহকে মান্যকারী কেউ তা ভোগ করতে পারে এবং তাতে ধার্মিকতা অজর্ন করতে পারে, যদিও সম্পদ তোমার জন্য মন্দ ছিল।

অথবা-

২. আল্লাহকে অমান্যকারী কেউ তা ভোগ করতে পারে; সেক্ষেত্রে পাপ অর্জন করবে এবং তুমি তাতে সহায়তা করেছে বলে ধরা হবে। সুতরাং যারা মরে গেছে তাদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা কর আর যারা বেঁচে আছে তাদের জন্য আল্লাহর রেজেক কামনা কর।’

(চলবে…)

…………………………….
সূত্র: নাহজ আল-বালাঘা

…………………………….
আরো পড়ুন:
মাওলা আলীর বাণী: ১
মাওলা আলীর বাণী: ২

মাওলা আলীর বাণী: ৩
মাওলা আলীর বাণী: ৪
মাওলা আলীর বাণী: ৫
মাওলা আলীর বাণী: ৬
মাওলা আলীর বাণী: ৭
মাওলা আলীর বাণী: ৮
মাওলা আলীর বাণী: ৯
মাওলা আলীর বাণী: ১০
মাওলা আলীর বাণী: ১১

মাওলা আলীর বাণী: ১২
মাওলা আলীর বাণী: ১৩
মাওলা আলীর বাণী: ১৪
মাওলা আলীর বাণী: ১৫

মাওলা আলীর বাণী: ১৬
মাওলা আলীর বাণী: ১৭
মাওলা আলীর বাণী: ১৮
মাওলা আলীর বাণী: ১৯
মাওলা আলীর বাণী: ২০

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!