ভবঘুরেকথা

২৬
মনে কিছু গোপন করে রাখলে, তা মুখের ভাষা ও কথায় ঠিকই প্রকাশ পেয়ে যায়।

২৭
অসুস্থতার সময় যতটুকু পার হাঁটাচলা করো।

২৮
সব চাইতে সংযমী সেই, যে তা গোপন রাখে।

২৯
যখন তুমি পৃথিবী থেকে চলে যাবে এবং মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন এটা মোকাবেলা করার বিলম্বের কোন প্রশ্ন উঠে না।

৩০
আল্লাহকে ভয় করা! আল্লাহকে ভয় করা! আল্লাহর কসম, তিনি তোমাদের পাপ ততটুকু গোপন করবেন যতটুকু ক্ষমা করেছেন।

৩১
ইমান চারটি খুঁটির ওপর স্থাপিত। এটা হলো- ধৈর্য, দৃঢ়-প্রত্যয়, ন্যায় বিচার ও জিহাদ।

ধৈর্যের আবার চারটি দিক আছে- একাগ্রতা, ভীতি, দুনিয়া বর্জন ও বাসনা পরিত্যাগ। যে দোযখের আগুনকে ভয় করে সে অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকে; যে দুনিয়াকে বর্জন করে সে দুঃখ-দুর্দশাকে তুচ্ছ মনে করে এবং যে মৃত্যুর কথা চিন্তা করে সে সৎ আমলের দিকে দ্রুত এগিয়ে যায়।

দৃঢ়-প্রত্যয়েরও চারটি দিক আছে- বিচক্ষণ উপলব্ধি, বুদ্ধিমত্তা ও বোধগম্যতা, আদর্শ কিছু থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং অতীতের নজির অনুসরণ। সুতরাং যে বিচক্ষণতার সাথে উপলব্ধি করে প্রজ্ঞাপূর্ণ জ্ঞান তার কাছে পরিস্ফুট হয়ে উঠে। যার কাছে প্রজ্ঞাপূর্ণ জ্ঞান পরিস্ফুট হয় সে ইন্দ্রিয় গোচর সকল বস্তু থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। শিক্ষাপূর্ণ বস্তু যার ইন্দ্রিয় গোচর হয়। সে অতীতকালের লোকদের মতো।

ন্যায় বিচারেরও চারটি দিক আছে- তীক্ষ্ম বোধ, গভীর জ্ঞান, সিদ্ধান্ত নেয়ার উত্তম ক্ষমতা এবং দৃঢ়-ধৈর্য; সুতরাং যে বুঝতে পারে সে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে; যার সারগর্ভ জ্ঞান থাকে সে বিচার করতে পারে এবং যে ধৈর্যের অভ্যাস করে সে অসৎ আমল করে না এবং জনগণের মধ্যে প্রশংসনীয় জীবন যাপন করে।

জিহাদেরও চারটি দিক আছে- ভালো কাজ করার জন্য অন্যকে বলা, পাপ কাজ থেকে অন্যকে বিরত রাখা, আল্লাহর পথে সর্বান্তিকরণে যুদ্ধ করা ও পাপীদের ঘৃণা করা। সুতরাং যে অন্যকে ভালো কাজ করার কথা বলে সে ইমানদারদের শক্তি জোগায়; যে অন্যদের পাপ কাজে বাধা দেয় সে অবিশ্বাসীকে অবনমিত করে; যে সর্বান্তিকরণে যুদ্ধ করে সে তার সকল দায়িত্ব পালন করে এবং যে পাপপূর্ণ কাজকে ঘৃণা করে ও তাতে রাগান্বিত হয় আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট থাকেন এবং শেষ বিচারে তাকে আনন্দিত করবেন।

ইমানহীনতাও চারটি খুঁটির ওপর স্থাপিত- খেয়ালের বশবর্তী হওয়া, পারস্পরিক বিবাদ, সত্য পথ থেকে ভ্রষ্ট হওয়া, মতদ্বৈধতা ও বিরোধ। সুতরাং যে খামখেয়ালিভাবে চলে সে ন্যায়ের প্রতি ঝুকতে পারে না; অজ্ঞতার কারণে যে বিবাদে লিপ্ত হয় সে ন্যায় হতে স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে থাকে; যে সত্য থেকে সরে যায় তার কাছে ভালো মন্দ হয়ে যায় এবং মন্দ ভালো হয়ে যায়।

এতে সে বিপথগামিতায় নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং যে আল্লাহ ও রাসূলের সাথে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে তার পথ বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়ে, তার কর্মকাণ্ড জটিল হয়ে পড়ে এবং তার উদ্ধার পাবার পথ ক্ষীণ হয়ে পড়ে।

সংশয়েরও চারটি দিক আছে- অযৌক্তিকতা, ভয়, অস্থিরতা ও সবকিছুতে অযাচিত সমর্পণ। সুতরাং যে অযৌক্তিকতার পথ বেছে নেয়। তার রাত্রি কখনো প্রভাত হয় না, যে কোন কিছু আপতিত হবার ভয়ে ভীত সে দৌড়ে পালায়, যে অস্থির স্বভাব সম্পন্ন সে শয়তানের পায়ে দলিত হয় এবং যে ধ্বংসের প্রতি আত্মসমর্পণ করে সে তাতে নিমজ্জিত হয়।

৩২
কল্যাণকর কাজ যে করে সে কল্যাণ থেকে অধিকতর ভালো এবং পাপী পাপ থেকে নিকৃষ্ট।

৩৩
উদার হয়ো কিন্তু অপচয়কারী হয়ো না; মিতব্যয়ী হয়ো কিন্তু কৃপণ হয়ো না।

৩৪
আকাঙ্খা পরিত্যাগ করাই সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ।

৩৫
মানুষ যা পছন্দ করে না কেউ তা বলতে তাড়াহুড়া করলে মানুষ সে ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কিছু রটিয়ে দেয় যা তারা জানে না।

৩৬
যে আকাঙ্খাকে প্রসারিত করে সে নিজের আমল ধ্বংস করে।

৩৭
একদা সিরিয়া যাবার সময় আল-আনবার এলাকার অধিবাসীরা আলীকে দেখে সম্মান প্রদর্শন করতে পায়ে হেঁটে এবং তার আগে আগে দৌড়াতে শুরু করলো। এ দেখে আলী বললেন, আল্লাহর কসম, এতে তোমাদের নেতার কোন উপকার হবে না।

এতে তোমরা নিজেদেরকে কষ্ট দিচ্ছ এবং পরকালের জন্য কৃপণতা অর্জন করছো। যার পিছে পিছে ঘুরছে তার জন্য এ শ্রম কতই না ক্ষতিকর। দোযখের আগুন থেকে মুক্তি পাবার যে পথ তা কতই না লাভজনক।

৩৮
ইমাম আলী তাঁর পুত্র হাসানকে বলেন- ‘হে আমার পুত্র, (প্রথমে) চারটি এবং (পরে) চারটি বিষয় আমার কাছ থেকে সংরক্ষণ কর। এতে তুমি তার সঙ্গে যা কিছুই কর কখনই তোমার ক্ষতি হবে না।

বিষয়গুলো হলো- নিশ্চয় সবচেয়ে বড় অমুখাপেক্ষিতা হলো বুদ্ধিমত্তা; সবচেয়ে বড় নিঃস্বতা হলো মূর্খতা, সবচেয়ে বড় ভয় ও একাকিত্ব হলো আত্মঅহমিকা এবং সবচেয়ে সম্মানজনক পরিচয় হলো সুন্দর চরিত্র ও ব্যবহার।

হে পুত্র! মূর্খ লোকের বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাক। কারণ, সে তোমার উপকার করতে গিয়ে অপকার করে ফেলবে। কৃপণ ব্যক্তির সঙ্গেও বন্ধুত্ব করো না। কারণ, যখন তোমার তার সাহায্যের তীব্র প্রয়োজন পড়বে সে তোমাকে সাহায্য করা থেকে বিরত থাকবে।

পাপী ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না। কারণ, সে তোমাকে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেবে। মিথ্যাবাদীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না। কারণ, সে মরীচিকার মত। তাই দূরের জিনিসকে সে তোমার জন্য কাছের (ও সহজলভ্য) এবং কাছের জিনিসকে দূরের (ও দুর্লভ্য) হিসেবে তুলে ধরবে।

৩৯
নফল ইবাদত করতে গিয়ে যদি ফরজ ইবাদতের ব্যাঘাত ঘটে তবে তার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া যায় না।

৪০
জ্ঞানী লোকের জিহ্বা হৃদয়ে, আর মূর্খ লোকের হৃদয় জিহ্বায়।

৪১
মূর্খের হৃদয় মুখে আর জ্ঞানীর জিহ্বা হৃদয়ে।

৪২
মাওলা আলী তাঁর এক সহচরের অসুস্থতার সময় বলেন- ‘আল্লাহ্ তোমার রোগকে পাপ খণ্ডনের উপায় করে দিন। কারণ, অসুস্থতার কোন পুরস্কার নেই। কিন্তু তা তোমার পাপকে মোচন করে এবং তা শুকনো পাতার মতো ঝরিয়ে দেয়। পুরস্কার শুধু মুখের কথা এবং হাত ও পায়ের দ্বারা সম্পাদিত কর্মে।

মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে হৃদয়ের নিয়তের সততা এবং আত্মিক পবিত্রতার অধিকারীদের যাকে ইচ্ছা বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।’

৪৩
খাব্বার ইবনে আল-আরাতের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক, যেহেতু সে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে, অনুগতভাবে মক্কা থেকে হিজরত করেছে। যা আছে তাতেই তৃপ্ত, আল্লাহতে সন্তুষ্ট এবং একজন মুহাজিরের জীবন যাপন করেছে।

৪৪
যে ব্যক্তি পরকালের কথা মনে রেখে ও জবাবদিহি করতে হবে মনে রেখে কাজ করে এবং যা আছে তাতে তৃপ্ত থেকে আল্লাহতে সন্তুষ্ট থাকে সেই ব্যক্তি সব চাইতে আশীবার্দপুষ্ট।

৪৫
আমার এ তরবারি দিয়ে কোন ইমানদারের নাকে যদি আমি আঘাতও করি তবু সে আমাকে ঘৃণা করবে না। আবার আমাকে ভালোবাসার জন্য যদি আমি মোনাফেকের সামনে দুনিয়ার সকল সম্পদ স্তূপীকৃত করে দেই।

তবুও সে আমাকে ভালোবাসবে না। এর কারণ হলো পরম প্রিয় রাসূল তাঁর নিজ মুখে বলেছেন, ‘হে আলী! ইমানাদাররা কখনো তোমাকে ঘৃণা করবেন না এবং মোনাফেকরা কখনো তোমাকে ভালোবাসবে না।’

৪৬
যে মন্দ কাজ তোমাকে দুঃখিত করে, তা আল্লাহর কাছে তোমার ঐ সৎকর্ম থেকে উত্তম যা তোমাকে গর্বিত করে।

৪৭
সাহস অনুসারে মানুষের মূল্যায়ন হয়। মেজাজের ভারসাম্য অনুসারে সত্যবাদিতা মূল্যায়ন হয়। আত্মসম্মানবোধ অনুসারে শৌর্য এবং লজ্জাবোধ অনুসারে সততার মূল্যায়ন হয়।

৪৮
সংকল্পের ফলে বিজয়, বিচারবুদ্ধির ফলে সংকল্প এবং গোপনীয়তা রক্ষায় বিচারবুদ্ধি গড়ে ওঠে।

৪৯
সম্মানী লোক যখন ক্ষুধার্ত হয় এবং হীন লোকের যখন উদর পূর্ণ থাকে (তখন) তাদের আক্রমণকে ভয় কর।

৫০
মানুষের হৃদয় বন্য পশুর মতো; যে তাদের পোষে তার ওপর তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে।

…………………………….
সূত্র: নাহজ আল-বালাঘা

…………………………….
আরো পড়ুন:
মাওলা আলীর বাণী: ১
মাওলা আলীর বাণী: ২

মাওলা আলীর বাণী: ৩
মাওলা আলীর বাণী: ৪
মাওলা আলীর বাণী: ৫
মাওলা আলীর বাণী: ৬
মাওলা আলীর বাণী: ৭
মাওলা আলীর বাণী: ৮
মাওলা আলীর বাণী: ৯
মাওলা আলীর বাণী: ১০
মাওলা আলীর বাণী: ১১

মাওলা আলীর বাণী: ১২
মাওলা আলীর বাণী: ১৩
মাওলা আলীর বাণী: ১৪
মাওলা আলীর বাণী: ১৫

মাওলা আলীর বাণী: ১৬
মাওলা আলীর বাণী: ১৭
মাওলা আলীর বাণী: ১৮
মাওলা আলীর বাণী: ১৯
মাওলা আলীর বাণী: ২০

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!