৪২৬
কোন একজন আলীের সম্মুখে ‘আস্তাগাফিরুল্লাহ’ বলাতে তিনি বলেন, ‘তোমার মাতাপুত্র হারা হোক; তুমি কি জান ইস্তিগফার কী? উচ্চ মর্যাদাশীল ব্যক্তিদের জন্যই ইস্তিগফার।’
এ শব্দটি ৬টি খুঁটির উপর প্রতিষ্ঠিত-
প্রথম- অতীত বিষয়ে অনুতাপ।
দ্বিতীয়- সেদিকে আর প্রত্যাবর্তন না করার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তৃতীয়- মানুষের সকল অধিকার পূরণ করা যাতে আল্লাহর কাছে পরিস্কার ভাবে যেতে পারে এবং কোন জবাবদিহি করতে না হয়।
চতুর্থ- সকল দায়িত্ব পালন করা যাতে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
পঞ্চম- হারাম রোজগার দ্বারা যে মাংস শরীরে হয়েছে অনুতাপে তা গলিয়ে দেয়া যেন চামড়া হাড়ের সঙ্গে লেগে যায় এবং আবার নতুন মাংস গজায়।
ষষ্ঠ- আল্লাহর আনুগত্যের বেদনা সহ্য করার জন্য দেহকে গড়ে তোলা। এ অবস্থায় তুমি ‘আস্তাগাফিরুল্লাহ্’ বলতে পার।
৪২৭
ক্ষমাশীলতা জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর মতো আত্মীয়।
৪২৮
আদম সন্তানরা কতই না দুর্বল! তার মৃত্যু গুপ্ত, তার রোগ-ব্যাধি অজানা, তার আমল সংরক্ষিত। একটা মশার কামড় তাকে ব্যথা দেয়। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয় এবং ঘর্মাক্ত হলে তার শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।
৪২৯
একদিন আলী তার সহচরদের মাঝে বসেছিলেন। এমন সময় তাদের পাশ দিয়ে একজন সুন্দরী মহিলা যাচ্ছিলেন। সহচরীরা ওই মহিলার দিকে তাকাতে শুরু করলো।
আলী বললেন, ‘এ লোকগুলোর চক্ষু লোলুপ; তাদের লোলুপ হবার কারণ হলো তাকানো। যদি কোন নারীর সৌন্দর্যে তোমরা আকর্ষিত হও তবে তোমাদের স্ত্রীর কাছে চলে যেয়ো, কারণ এ মহিলাও তোমাদের স্ত্রীর মতো।’
একজন খারেজি একথা শুনে বললো, ‘প্রচলিত মতবিরোধী এ লোকটিকে আল্লাহ নিধণ করুন। সে কতইনা যুক্তিবাদী।’
এ কথা শোনামাত্র আলীর অনুচররা লোকটিকে হত্যা করতে উদ্ধত হলো। কিন্তু আলী বললেন, ‘তোমরা থামো। গালির বদলে তোমরা গালি দিতে পার। অন্যথায় অপরাধ ক্ষমা করে দেয়াই ভালো।’
৪৩০
তোমার জ্ঞান দ্বারা যদি ধ্বংসের পথ ও হেদায়েতের পথ পরখ করতে পার তবে তা তোমার জন্য যথেষ্ট।
৪৩১
মানুষের কল্যাণ করো। কল্যাণকর কাজের কোন অংশকে ক্ষুদ্র মনে করো না কারণ এর ক্ষুদ্রাংশও অনেক বড়। কল্যাণকর কাজের বেলায় কখনো একথা বলো না যে, ‘আমার অপেক্ষা অন্য ব্যক্তি এ কাজের জন্য অধিক উপযুক্ত।’
যদি এরকম কথা বলো তবে মনে রেখো, আল্লাহর কসম, বাস্তবে তাই ঘটবে। সমাজে ভালো ও মন্দ উভয় ধরণের লোক আছে। তুমি যেটা ফেলে রাখবে অন্যরা সেটা করে ফেলবে।
৪৩২
যে নিজের বাতেনকে সঠিক পথে রাখে আল্লাহ তার বাহ্যিক দিক সঠিক পথে রাখেন। যে দ্বীনের খেদমত করে আল্লাহ তার দুনিয়ার কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে দেন। যে আল্লাহ ও তার নিজের মধ্যকার কর্মকাণ্ড সৎভাবে করে আল্লাহ ওই ব্যক্তির ও অন্য লোকদের মধ্যকার কর্মকাণ্ড কল্যাণকর করে দেন।
৪৩৩
ধৈর্য দুর্বলতা ঢাকার এক প্রকার পর্দা এবং জ্ঞান তীক্ষ্ণ তরবারি। সুতরাং তোমার স্বভাবের দুর্বলতা ধৈর্য দ্বারা ঢেকে রেখো এবং জ্ঞান দ্বারা কামনা-বাসনাকে হত্যা করো।
৪৩৪
আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছেন যাদেরকে আল্লাহ তার নেয়ামত দ্বারা অভিষিক্ত করে রেখেছেন যেন তারা অন্যদের উপকারে আসে। সুতরাং তিনি তাঁর নেয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের হাতে রাখেন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তা অন্যকে প্রদান করে।
যখন তারা নেয়ামত অন্যকে প্রদানে অস্বীকৃতি জানায় তখন আল্লাহ তা তুলে নিয়ে যান এবং অন্যকে প্রদান করেন।
৪৩৫
দুটি জিনিষ নিয়ে মানুষের গর্ব করা উচিৎ নয়, এক- স্বাস্থ্য আর দুই- সম্পদ। কারণ এখন যাকে স্বাস্থ্যবান দেখছো একটু পরেই সে রুগ্ন হয়ে পড়তে পারে এবং এখন যাকে ধন্যবান দেখছো একটু পরেই সে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।
৪৩৬
যে ব্যক্তি অভাব-অভিযোগের বিষয় কোন মুমিনের কাছে বলে সে যেন তা আল্লাহর কাছে বললো। আর যদি কোন কাফেরের কাছে বলে তবে সে যেন আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো।
৪৩৭
এক ঈদের দিনে আলী বলেন, সে ব্যক্তির জন্য ঈদ যার সিয়াম আল্লাহ গ্রহণ করেন এবং যার সালাতে তিনি সন্তুষ্ট। বস্তুত যেদিন মানুষ কোন পাপ করে না সেদিনই তার জন্য ঈদ।
৪৩৮
বিচার দিনে সে ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা বেশি অনুতপ্ত হবে যে অন্যায় পথ অবলম্বন করে সম্পদ উপার্জন করেছে। সম্পদের উত্তরাধিকারী যদি আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে তবে সে বেহেশতবাসী হবে; কিন্তু প্রথম উপার্জনকারী তার অপরাধের জন্য দোযখবাসী হবে।
৪৩৯
যে ব্যক্তির ভাগ্যে ধনসম্পদ না থাকা সত্ত্বেও তার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালায় সে ব্যক্তি জীবনে অকৃতকার্যতার গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকে। সে ব্যক্তি এ পৃথিবী থেকে দুঃখপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। আবার পরকালেও ধনী লোলুপতার ফল ভোগ করবে।
৪৪০
জীবিকা দুই প্রকারের- অনুসন্ধাকারী ও যা অনুসন্ধান করা হয়েছে।
সুতরাং যে এ দুনিয়ার প্রতি লালায়িত হয় মৃত্যু তাকে সন্ধান করে নেয় দুনিয়া থেকে মুখ ফেরানোর পূর্বেই। আর যে ব্যক্তি পরকালের প্রতি লালায়িত থাকে জাগতিক আরাম-আয়েশ তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত চায় যতক্ষণ পর্যন্ত সে দুনিয়া থেকে জীবিকা গ্রহণ না করে।
৪৪১
আল্লাহ প্রেমীরা এ দুনিয়ার অন্তর্দিকে দৃষ্টিপাত করে। আর অন্যরা বর্হিদিকে দৃষ্টিপাত করে। আল্লাহ প্রেমীরা সুদূর প্রসারী লাভের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আর অন্যরা আপাত লাভের জন্য ব্যস্ত থাকে। আল্লাহ প্রেমীরা সেসব জিনিসকে হত্যা করে যা তাদের হত্যা করবে বলে ভয় করে এবং এ পৃথিবীতে সেসব জিনিস ত্যাগ করে যা তাদের ত্যাগ করবে বলে মনে করে।
অন্যদের ধন-সম্পদ স্তূপীকরণকে তারা অতি নগণ্য বিষয় বলে মনে করে। অন্যরা যেটা ভালোবাসে আল্লাহ প্রেমীরা সেটাকে শত্রু বলে মনে করে। আবার তারা যেটাকে ভালোবাসে অন্যরা তা ঘৃণা করে। আল্লাহ প্রেমীদের মাধ্যমে কোরানের শিক্ষা প্রসারিত হয় এবং কোরানের মাধ্যমেই তারা জ্ঞান লাভ করে।
তাদের সাথেই কোরান থাকে এবং তারা কোরানে প্রতিষ্ঠিত। তারা কোন অসম্ভব আশা পোষণ করে না এবং যা ভয়ের কারণ সেটা ছাড়া অন্য কিছুকে ভয় করে না।
৪৪২
মনে রেখো, আনন্দ চলে যাবে কিন্তু তার ফলাফল থেকে যাবে।
৪৪৩
কোন ব্যক্তিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঘৃণা করো।
৪৪৪
মহান রাব্বুল আলামিন এমন নয় যে, কারো জন্য শুকরিয়ার দ্বার খোলা রেখেছেন এবং নেয়ামত ও প্রাচুর্যের দ্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। কারো জন্য সালাতের দ্বার খুলে দিয়েছেন। আর তা কবুলের দ্বার বন্ধ করে দিয়েছেন অথবা কারো জন্য তওবার দ্বার খুলে দিয়েছেন এবং তাকে ক্ষমা করার দ্বার বন্ধ করে দিয়েছেন।
৪৪৫
সম্মানজনক পদমর্যাদার জন্য সেই ব্যক্তি অধিক উপযোগী যে সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত।
৪৪৬
কোন এক ব্যক্তি আলীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ন্যায় বিচার ও উদারতা এ দুটির কোনটি অধিক ভালো।’
উত্তরে তিনি বলেন, ন্যায়বিচার কোন বিষয়কে যথাযোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে; আর উদারতা সেসব বিষয়কে যথাযোগ্য দিক থেকে সরিয়ে নিতে পারে।
ন্যায় বিচার হলো সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক আর উদারতা হলো নির্দিষ্ট বিশেষ সুবিধা। ফলতঃ ন্যায় বিচার উদারতা অপেক্ষা বড় ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
৪৪৭
মানুষ যা জানে না সেই বিষয়ের সে শত্রু।
(চলবে…)
…………………………….
সূত্র: নাহজ আল-বালাঘা
…………………………….
আরো পড়ুন:
মাওলা আলীর বাণী: ১
মাওলা আলীর বাণী: ২
মাওলা আলীর বাণী: ৩
মাওলা আলীর বাণী: ৪
মাওলা আলীর বাণী: ৫
মাওলা আলীর বাণী: ৬
মাওলা আলীর বাণী: ৭
মাওলা আলীর বাণী: ৮
মাওলা আলীর বাণী: ৯
মাওলা আলীর বাণী: ১০
মাওলা আলীর বাণী: ১১
মাওলা আলীর বাণী: ১২
মাওলা আলীর বাণী: ১৩
মাওলা আলীর বাণী: ১৪
মাওলা আলীর বাণী: ১৫
মাওলা আলীর বাণী: ১৬
মাওলা আলীর বাণী: ১৭
মাওলা আলীর বাণী: ১৮
মাওলা আলীর বাণী: ১৯
মাওলা আলীর বাণী: ২০