ভবঘুরেকথা
ধ্যান চক্র সপ্তচক্র যোগ আসন

ধ্যানযোগ : পর্ব এক

-দ্বীনো দাস

ধ্যান মূলত তিন প্রকার-

১. সমাধি ধ্যান।
২. সবিকল্প সমাধি ধ্যান।
৩. নির্বিকল্প সমাধি ধ্যান।

কেবল ধ্যানেই আমাদের চির আরাধ্য সত্তাটি, আমাদের চিত্তে তার প্রকৃত স্বরূপে ধরা দেন। ধ্যানের বিভিন্ন স্তর আছে। প্রথমে এই পার্থিব জগতের সব কিছুতেই ঈশ্বরের উপস্থিতি উপলব্ধি করতে হয়। অনুভূতির সমস্ত গভীরতা দিয়ে। দ্বিতীয়ত আর একটু উচ্চতর স্তরে দৃষ্টিকে অন্তর্মুখী করে তাকে অনুভব করতে হয় নিজের অন্তরে।

সবশেষে একেবারে উচ্চতর স্তরে, আত্মা নিজের সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে, এক মহাপবিত্র অজ্ঞতায়, তারপর প্রেম ও ভালোবাসার রসে সিক্ত হয়ে তৈরি হয় দিদার; ঈশ্বরের সাথে বা ফানাফিল্লাহ। প্রেমে ঈশ্বরের সাথে সম্পূর্ণ একাত্ম হয়ে জীবাত্মার সম্পর্ক উত্তীর্ণ করার পর। তবেই হয় পরমাত্মার সাথে মিলন।

সমাধি

পরমাত্মার মধ্যে জীবাত্মার নিবেশ, চিত্তবৃত্তির নিরোধ পূর্বক স্বরূপে অবস্থিত; বাহ্য জ্ঞানহীন ধ্যানের চরম অবস্থা। সম্পূণর্রূপে ঈশ্বরের ভাবনা ভাবতে হয় গভীর তন্ময়তা দিয়ে।

সবিকল্প সমাধি

সহ-বিকল্প, এই সমাধি ধ্যানে ষট্চক্র ভেদ করে জীবত্মাকে পাঠিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু পরমাত্মা সম্পূর্ণ লয় হয় না। কারণ সবিকল্প সমাধিতে ফিরবার বাসনা থাকে। তাই ফেরার টান থাকে অল্পমাত্রায় প্রাণবায়ু টিকটিক করে।

নির্বিকল্প সমাধি

এই ধ্যানে অনেকে ফিরতে পারে অনেকে ফিরতে পারে না। এই ধ্যানে নিধিধ্যাসন বসা ভালো। প্রথমে আমিত্বের প্রসার করতে হয়। তারপর সেই আমিত্বকে ছড়িয়ে দিতে হয় বিশ্বময়। ভাবতে হয় সমস্ত জগৎটাই আমি।

আমিত্বের প্রসারের সাথে সাথে মন ঊর্ধ্বজগতে উঠতে থাকে। উঠবার সময় দেখা যায় একটা জ্যোতিময় আলো। ক্রমে উপরে উঠলে আরো বেশী জ্যোতিময় আলো দেখা যায়। এই ভাবে ক্রমশই বেশী আলোময় অবস্থান দেখা যায়। আর মনে হয় এক একটা অজ্ঞানতার (কপাট) দরজা খুলে যাচ্ছে।

শেষে সব কটা দরজা, আলোর কপাট বা লোক পার হবার পর এক মহা জ্যোতির্ময় মণ্ডলে এসে পড়ে। শেষে আমিত্ব সমস্ত কোণায় ছড়িয়ে পড়ে আর তখনই সেই আত্মা পরম স্রষ্টার সাথে একাত্মায় লীন হয়ে যায়।

এই ধ্যান করতে হয় ষট্চক্রের উপর নিরিখ রেখে। তাই আগে অবশ্যই জানতে হবে দেহের কথায় কোন চক্রের অবস্থান এবং এই চক্রগুলি কি ভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে আর (চক্রগুলির) কাজ কি আমাদের এই মানব শরীরে।

(চলবে…)

সপ্তচক্র লতিফা : পর্ব দুই>>

…………….
আরো পড়ুন:
ধ্যানযোগ : পর্ব এক
সপ্তচক্র লতিফা : পর্ব দুই

প্রবৃত্তি : পর্ব তিন
ধ্যান : পর্ব চার
অন্তস্রাবী গ্রন্থি : পর্ব পাঁচ
চক্র : পর্ব ছয়
সাধিষ্ঠান চক্র : পর্ব সাত
মনিপুর চক্র : পর্ব আট  
অনাহত চক্র : পর্ব নয়
বিশুদ্ধ চক্র : পর্ব দশ
আজ্ঞা চক্র : পর্ব এগারো
সহস্রার চক্র : পর্ব বারো

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………….
আরো পড়ুন:
অবশ জ্ঞান চৈতন্য বা লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া
ঈশ্বর প্রেমিক ও ধৈর্যশীল ভিখারী
সুখ দুঃখের ভব সংসার
কর্ম, কর্মফল তার ভোগ ও মায়া
প্রলয়-পূনঃউত্থান-দ্বীনের বিচার

ভক্তি-সংসার-কর্ম

………..
বি.দ্র.
আমার এই লেখা কিছু ইতিহাস থেকে নেওয়া কিছু সংগৃহীত, কিছু সৎসঙ্গ করে সাধুগুরুদের কাছ থেকে নেওয়া ও আমার মুর্শিদ কেবলা ফকির দুর্লভ সাঁইজি হতে জ্ঞান প্রাপ্ত। কিছু নিজের ছোট ছোট ভাব থেকে লেখা। লেখায় অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।। আলেক সাঁই। জয়গুরু।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!