ধ্যান : পর্ব চার
-দ্বীনো দাস
সূক্ষ্ম যদি সামান্যতম ও সামজ্ঞস্যের ব্যতিক্রম হয় তাহলে শরীর থেকে প্রাণশক্তি (প্রাণ-উর্জা) বাহিরে বেরিয়ে আসে, মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়।
যোগ সাধনা পন্থায় বলে- মেরুদণ্ডের শিরদাড়ার হাড়ের ভেতর তিনটি নাড়ী অবস্থান করে স্থুল রূপে- ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না।
ত্রিধারায় যোগানন্দ
কার সঙ্গে কার কি সম্বন্ধ
সুনলে ঘোচে মনের সন্দেহ
প্রেমানন্দ বাড়ে হৃদয়
শক্তিতত্ত্ব পরম তত্ত্ব সত্য যাহার হয়।।
-সাঁইজি ফকির লালন
আমাদের শরীরে যোগমতে ৭টি চক্র আছে, সুফি মতে ৬ লতিফা। যোগমতে- মুলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মনিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ, আজ্ঞা, সহস্রার। এই সব এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা পরে দেবার চেষ্টা করবো।
ঐ সুষুম্না নাড়ীর সবচেয়ে নীচের অংশকে মুলাধার চক্র বলে। ঐ চক্রের কুলকুণ্ডলিনী শক্তি (Coil Energy) সাড়ে তিন প্যাচে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সাধক তার যোগ সাধনা দ্বারা এই কুণ্ডলিনী শক্তিকে জাগ্রত করে উপরিস্থিত চক্রগুলিতে প্রবেশ করাতে করাতে সর্বোচ্চ উপরে সহস্রারে নিয়ে যেতে পারে।
আর তখন তার স্বরূপ দর্শন ঘটে। এই অবস্থা অতি উচ্চর্মাগের উচ্চতর আধ্যাত্ম স্তর, পরমানান্দদায়ক দিব্য অনুভূতি ও দর্শন।
কুলকুণ্ডলিনী শক্তি বায়ু বিকারে
অচৈতন্য হয়ে আছে মুলাধারে,
গুরুদত্ত তত্ত্ব সাধনেরই জোরে
চেতন কর তাহারে।।
-সাঁইজি ফকির লালন
এই চক্রগুলি জাগ্রত বা সক্রিয় করতে গেলে বাতাসের দমের ঘরে কিছু কাজ আছে। অজপা জপ ও রেচক, পুরক, কুম্ভক। নাভি থেকে দক্ষিণ দিকে নিয়া দম বায়ু, বায়ে হৃদপিণ্ড ও ডান হৃদপিণ্ড হয়ে কণ্ঠনালী দিয়া ঊর্ধ্বের উঠানোর সশব্দ জপের পদ্ধতি গুরু ভক্তকে শিখিয়ে দেন।
নিচের তিন চক্র বা গ্রন্থিগুলো শারীরিক প্রয়োজনীয়তা ও ভাবনার সঙ্গে সংযুক্ত। উপরের চক্রগুলি মানুষিক ও আধ্যাত্মিক অবস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত। যখন কোন ব্যক্তি মানসিক উদ্বেগ ও চাপের মধ্যে থাকে (Negative) ভাবাবেশে তখন- ক্রোধ, ঘৃণা, ভয়, কাম, লোভ, মোহ, হতাশা ইত্যাদির বশীভূত হয়ে পড়ে তখন এই চক্রগুলোর শক্তি প্রবাহতে ভারসাম্যের অভাব ঘটে।
এ ভাবের বিভিন্ন রকমের বায়ুর যোগ ক্রিয়া আছে। রেচক পুরক কুম্ভক ৪, ৮, ১৬ করে ক্রমে ৩২, ৬৪, ১০৮ করা যায়। যেমন পুরক-১২, কুম্ভক-১৮, রেচক-২৪ এরই সাথে সাথে অজপা জপ করতে হয়। এভাবে সাধনার অভ্যাস জন্মে এবং চক্রগুলির শক্তির উপর তাদের অধিকার জন্মে।
যাহোক এই সংখ্যার দমের ঘরের যে জপ এই বিষয়ে গুরুর কৃপা হলে পরে আলোচনা করবো।
এই চক্র বা লতিফাগুলোর ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন। তারা কিন্তু শুধু কথায় বিশ্বাসী নয় বাস্তব পরীক্ষায় বিশ্বাসী- যেমন শরীর বিজ্ঞানীরা এই চক্র বা লতিফাগুলোকে দেহের অন্তঃস্রাবী গ্রন্থির অবস্থান বলে স্বীকার করেন।
এই অন্তঃস্রাবী গ্রন্থিসমূহ আমাদের রক্তের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের হর্মনের মিশ্রণ ঘটায়। এই মিশ্রণের কারণেই আমাদের শরীর, মস্তিষ্ক ও মনের পূষ্টি, স্বাস্থ্য বিকাশ হয়।
নিচের তিন চক্র বা গ্রন্থিগুলো শারীরিক প্রয়োজনীয়তা ও ভাবনার সঙ্গে সংযুক্ত। উপরের চক্রগুলি মানুষিক ও আধ্যাত্মিক অবস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত। যখন কোন ব্যক্তি মানসিক উদ্বেগ ও চাপের মধ্যে থাকে (Negative) ভাবাবেশে তখন- ক্রোধ, ঘৃণা, ভয়, কাম, লোভ, মোহ, হতাশা ইত্যাদির বশীভূত হয়ে পড়ে তখন এই চক্রগুলোর শক্তি প্রবাহতে ভারসাম্যের অভাব ঘটে।
‘খুব ভালো করে মনে রাখতে হবে প্রতিটি চক্রের একটা নিজেস্ব স্তম্ভ থাকে যা বাইরের পরিবেশ দ্বারা প্রতিনিয়ত প্রভাবিত হয়।’
বাইরের পরিবেশ বা বাতাবরনের পরিবর্তন হলে ঐ স্তম্ভের উপরে ও তার প্রভাব পড়ে এবং তখন সেই স্তম্ভ (যা চক্রের সঙ্গে জুড়ে থাকে) চক্রের স্পন্দনকে প্রভাবিত করে।
(চলবে…)
অন্তস্রাবী গ্রন্থি : পর্ব পাঁচ>>
…………….
আরো পড়ুন:
ধ্যানযোগ : পর্ব এক
সপ্তচক্র লতিফা : পর্ব দুই
প্রবৃত্তি : পর্ব তিন
ধ্যান : পর্ব চার
অন্তস্রাবী গ্রন্থি : পর্ব পাঁচ
চক্র : পর্ব ছয়
সাধিষ্ঠান চক্র : পর্ব সাত
মনিপুর চক্র : পর্ব আট
অনাহত চক্র : পর্ব নয়
বিশুদ্ধ চক্র : পর্ব দশচক্র
আজ্ঞা চক্র : পর্ব এগারো
সহস্রার চক্র : পর্ব বারো
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………….
আরো পড়ুন:
অবশ জ্ঞান চৈতন্য বা লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া
ঈশ্বর প্রেমিক ও ধৈর্যশীল ভিখারী
সুখ দুঃখের ভব সংসার
কর্ম, কর্মফল তার ভোগ ও মায়া
প্রলয়-পূনঃউত্থান-দ্বীনের বিচার
ভক্তি-সংসার-কর্ম
………..
বি.দ্র.
আমার এই লেখা কিছু ইতিহাস থেকে নেওয়া কিছু সংগৃহীত, কিছু সৎসঙ্গ করে সাধুগুরুদের কাছ থেকে নেওয়া ও আমার মুর্শিদ কেবলা ফকির দুর্লভ সাঁইজি হতে জ্ঞান প্রাপ্ত। কিছু নিজের ছোট ছোট ভাব থেকে লেখা। লেখায় অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।। আলেক সাঁই। জয়গুরু।।