আল্লাহ্
-লুৎফর রহমান
বহুদিন আগে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- ’আল্লাহ্ কী? তিনি বললেন, আল্লাহ অনন্ত- তাঁকে কেউ জানে না।’
‘আল্লাহ’র এই ব্যাখ্যা মানুষের পক্ষে বিন্দুমাত্র আশার কথা নহে। ‘আল্লাহ্ অনন্ত’ শুনে আমাদের মন বিন্দুমাত্র বিচলিত ও চঞ্চল হয় না। এই ব্যাখ্যা ব্যাখ্যাই নয়। বস্তুত আরও অনেকে আল্লাহর ব্যাখ্যা অনেক কথায় দিয়ে থাকেন, তাতে আল্লাহর পরিচয় মানুষ একটুও। পায় না-মানুষ বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে ওঠে।
এই জগৎ, এই অনন্ত সৃষ্টি, অনন্ত জীবনের উৎস যিনি আছেন এবং থাকবেন- যিনি চিরসত্য, যিনি সর্বব্যাপী, যিনি আমাতে আছেন, যিনি আমাকে ভালবাসেন, প্রেম করেন, আমার সঙ্গে খেলা করেন, পথে পথে ঘুরে বেড়ান, আকাশে যার বাঁশি বাজে, হাম্বারবে যার অফুরন্ত প্রেম উছলে উঠে, যিনি মাতৃহারা শিশুর আর্তকণ্ঠে বিশ্বকে মা বলে ডাকেন- আমি।
তাঁকে দেখতে চাই, পেতে চাই, হৃদয়ে ধারণ করতে চাই।- ঝড়ের দোলায় তার ভীষণ হাস্য বাজে, বজ্রনিনাদে তার শঙ্কা ধ্বনিত হয়।অনন্ত সৃষ্টি তিনি বুকে ধারণ করে আছেন, তিনি নর-নারীর অঙ্গশ্রীতে লীলায়িত হন, গানের সুরে তিনি ক্রন্দন করেন- সেই অশ্রুর দেবতাকে আমি দেখতে চাই-
এতভাবে মনুষ্যকে তুমি ধরা দিচ্ছ- তবুও দেখলাম, তোমার রূপ সমস্ত গগন-পবনে ছড়িয়ে আছে, সমস্ত অবুঝ মনুষ্য বলে- তোমাকে দেখি নাই। প্রাতঃকালে যখন উঠলাম, তখন প্রকৃতিতে তোমার পায়ের নির্মল সুরভি লেগে আছে, সমস্ত দিন ভরে নিজেকে প্রকাশ করলে তবু বলি তোমার রূপহীন।
অনন্ত আকাশে, নিথর রাতে তার ক্রন্দন শুনেছি, মুগ্ধ নির্জন প্রান্তরে তাঁর শোক বাতাসে বয়ে এনেছে, তাকে পাবার জন্যে মানব-চিত্ত ব্যাকুল হয়ে ছুটছে। আমি তাকে পেতে চাই, তাঁকে চুম্বন করতে চাই। মানব-চিত্তের চির-প্রেয়সীর অঞ্চল ধরে অনন্ত সোহাগে আমি বাসরের আনন্দ অনুভব করতে চাই।
‘আল্লাহ’ কী? তাঁর কোনো সিংহাসন নাই, কোনো আসন নাই, রূপ নাই- অন্তরের সঙ্গে তিনি মিশে আছেন। সুন্দর, কল্যাণ এবং সত্যে তিনি আছেন। তোষামোদে তাঁকে পাওয়া যাবে না। তিনি আছেন ত্যাগে, সহিষ্ণুতায় এবং প্রেমে! তিনি রূপমুক্ত প্রেম, কল্যাণ এবং জীবন্ত সত্য।
মনুষ্য যখন অন্যায়ভাবে আঘাত পেয়ে আঘাতকারীকে আশীর্বাদ করেছে, তখনই আমি তার রূপ দেখেছি। অসত্য ও অন্যায় দেখে মনুষ্য যখন লজ্জিত ও মর্মাহত হয়েছে, তখনই আমি তার রূপ দেখেছি। মনুষ্য যখন মনুষ্যের জন্য আঁখিজল ফেলেছে, তখনই আমি তাকে দেখেছি।
জননী যখন শিশুকে বুকে ধরেছেন, তখনই আমি তাকে দেখেছি। বন্য পশু যখন সন্তানের স্নেহে ব্যাকুল অস্থির হয়ে গর্জে ছুটেছে, তখনই সেই রূপহীনকে আমি চোখের জলে দেখেছি। হে রূপহীন! তুমি ধন্য!- তোমার এত রূপ, কে বলে তোমার রূপ নাই?
এতভাবে মনুষ্যকে তুমি ধরা দিচ্ছ- তবুও দেখলাম, তোমার রূপ সমস্ত গগন-পবনে ছড়িয়ে আছে, সমস্ত অবুঝ মনুষ্য বলে- তোমাকে দেখি নাই। প্রাতঃকালে যখন উঠলাম, তখন প্রকৃতিতে তোমার পায়ের নির্মল সুরভি লেগে আছে, সমস্ত দিন ভরে নিজেকে প্রকাশ করলে তবু বলি তোমার রূপহীন।
(চলবে…)
<<মানব-চিত্তের তৃপ্তি ।। শয়তান>>
………………..
মহৎ জীবন -লুৎফর রহমান।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………………….
আরও পড়ুন-
মানব-চিত্তের তৃপ্তি
আল্লাহ্
শয়তান
দৈনন্দিন জীবন
সংস্কার মানুষের অন্তরে
জীবনের মহত্ত্ব
স্বভাব-গঠন
জীবন সাধনা
বিবেকের বাণী
মিথ্যাচার
পরিবার
প্রেম
সেবা
এবাদত
………………….
আরও পড়ুন-
মহৎ জীবন : পর্ব এক
মহৎ জীবন : পর্ব দুই
মহৎ জীবন : পর্ব তিন
কাজ : পর্ব এক
কাজ : পর্ব দুই
কাজ : পর্ব তিন
কাজ : পর্ব চার
ভদ্রতা : এক
ভদ্রতা : দুই
……………………
আরও পড়ুন-
মহামানুষ … মহামানুষ কোথায়
মহিমান্বিত জীবন
মহামানুষ
যুদ্ধ
স্বাধীন গ্রাম্যজীবন
আত্মীয়-বান্ধব
সত্য প্রচার
নিষ্পাপ জীবন
উপাসনা
নমস্কার
তপস্যা
তীর্থ-মঙ্গল
আত্মার স্বাধীনতার মূল্যবোধ
মনুষ্য পূজা
মন্দতাকে ঘৃণা