কাজ : পর্ব এক
-লুৎফর রহমান
জীবনে মানুষকে কাজ করতে হবে, কারণ কাজের মাধ্যমেই মানব জীবনের সুখ ও কল্যাণ নিহিত। মানব সমাজের সুখ ও কল্যাণ বর্ধন ছাড়া জীবনে আর কিসে আনন্দ পাওয়া যায়? মানব সমাজের কথা বাদ দিয়ে যদি নিজের সুখের কথাও চিন্তা করা যায়, তা হলেও আমাদেরকে কাজ করতেই হবে। মাথার ঘাম পায়ে না ফেলে জগতে কোনো সম্পদ লাভ করা যায় না।
সাধনা ও পরিশ্রমের সঙ্গে যদি জ্ঞানের যোগ থাকে, তবে লাভ হয় খুব বেশি। মূর্খ শত পরিশ্রম করে যা না করতে পারে, জ্ঞানী অল্প পরিশ্রম করেই তা করতে পারেন। বড় বড় কল কারখানা রেলওয়ে, স্টীমার, তড়িতের অপূর্ব শক্তিরহস্য জ্ঞানীর মাথা হতেই বের হয়েছে।
আলস্য করেই জাতি ধ্বংসের পথ তৈরি করে। মানুষকে দোষ দিয়ে কী লাভ? কেউ আমাদেরকে ছোট করে না, নিজের পতনের পথ আমরা নিজেই তৈরি করে নেই।
এ জগতে শুধু মুটে-মজুরেরাই পরিশ্রম করবে- এ হতে পারে না। দৈনিক আহার সংস্থানের জন্য তাদেরকে পরিশ্রম করা দরকার হয় বটে; কিন্তু বড় যারা তাদেরকে পরিশ্রম করতে হবে। পয়সা-কড়ির অভাব নাই, নিজের অর্জিত ধন-সম্পত্তিতে দিন বেশ চলে যাচ্ছে, সুতরাং কোনো কাজ করবার দরকার নাই,- এমন কথা বলবার তোমার কোনো অধিকার নাই।
যাদের মধ্যে চরিত্রবলের খুব অভাব, যারা পরের ধন অপহরণ করে বাঁচতে চেষ্টা করে, তাদের পরিশ্রম করবার কোনো দরকার নাই। মানুষকে সত্যপথে জীবন-যাত্রা নির্বাহ করতে হলে, তার অক্লান্ত পরিশ্রম আর কঠিন সংযম চাই। মান-অপমানের জ্ঞান ভুলে যেতে হবে; ভেবে নিতে হবে চুরি করলে, পরমুখাপেক্ষী হয়ে অলস জীবনযাপন করলে জীবনের অপমান হয়।
এই যে ধন-সম্পত্তি, যা তুমি ভোগ করছ; এগুলি সগ্রহ করতে তোমার পিতাকে কতখানি পরিশ্রম করতে হয়েছিল, তা কী তুমি একটুও ভাব না? রাজা হও, নবাব হও, নিজের জন্য না হোক তোমার পাড়া-প্রতিবেশীর জন্য তোমাকে কাজ করতে হবে। কাজ না করে, এই দীর্ঘ জীবনটা কী করে কাটিয়ে দেওয়া যায়?
আলাপ, রহস্য, হাসিঠাট্টা, খেলাধূলায় অনুরক্ত ব্যক্তিরা অফুরন্ত আনন্দ লাভ করতে পারে, কিন্তু কেমন করে এই সব লক্ষ্যহীন তরুলতার মধ্যে তোমার মহিমান্বিত জীবনকে ডুবিয়ে রাখতে পার? তোমার কাজ আছে, বড় লোকদের সঙ্গে দেখা করে, হেসে, গান করে তুমি তোমার জীবনকে ব্যর্থ করে দিতে পার না!
এ জগতে যারা বড় হয়েছেন, নাম করে মানুষ ধন্য হয়- যারা জগৎ সংসারকে বহু কল্যাণ সম্পদ দিয়ে গিয়েছেন, তারা জীবনে অনবরত কাজ করেছেন। অলসের উপাসনার কোনো মূল্য নাই। কাজের মধ্যে কী এবাদত নাই? শুধু আল্লা আল্লা’ করে খোদাকে তৃপ্ত করা যায় না- এ তুমি বিশ্বাস কর।
দুঃখী নর-নারীর জন্য পরিশ্রম করা কী এবাদত নয়? বিপন্ন মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য সংগ্রাম করা কী এবাদত নয়? আল্লাহর জন্য পয়সা উপায় কী এবাদত নয়?
জগতে যে সমস্ত সুবিধা আমরা ভোগ করছি, এর মূলে কত মানুষের সাধনা বর্তমান- হয়তো কেউ তাদের নামও জানে না। যুদ্ধক্ষেত্রে যে সমস্ত মানুষ প্রাণ দিয়ে জাতির স্বাধীনতা রক্ষা করে, তাদের কয় জনের নাম মানুষের মনে আছে?
আলস্যে মানুষের এবং জাতির সর্বনাশ হয়, মানুষের সুখ ও জাতির কল্যাণের মূলে কুঠারাঘাত হয়। কতকগুলি মানুষ আয়াস-আরামে জীবন কাটাতে পারে; কিন্তু এই আয়াস-আরামের উপকরণ যোগাবার জন্যে বহু মানুষ প্রাণপণ পরিশ্রম করছে।
জাতির স্বাধীনতা ও শক্তি বাচিয়ে রাখবার জন্যে সভ্য জাতির মধ্যে কী বিপুল বিরাট সাধনা চলতে থাকে! ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যারা মোটেও চিন্তা করে না, তাদের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। যারা অভাগা, মূর্খ, তারা এ সমস্ত কথার কিছুই বোঝে না।
তাই তারা হাসি-উল্লাসে জীবন কাটিয়ে দেয়। নিজেদের উদ্যত সাধনা ব্যতীত খোদা কখনও মানুষকে বড় করে না। মানুষের অভাব বেদনা মানুষকেই মীমাংসা করতে হবে!
যাদের মধ্যে চরিত্রবলের খুব অভাব, যারা পরের ধন অপহরণ করে বাঁচতে চেষ্টা করে, তাদের পরিশ্রম করবার কোনো দরকার নাই। মানুষকে সত্যপথে জীবন-যাত্রা নির্বাহ করতে হলে, তার অক্লান্ত পরিশ্রম আর কঠিন সংযম চাই। মান-অপমানের জ্ঞান ভুলে যেতে হবে; ভেবে নিতে হবে চুরি করলে, পরমুখাপেক্ষী হয়ে অলস জীবনযাপন করলে জীবনের অপমান হয়।
সত্যপথে থেকে যে কোনো কাজ কর তোমার দুঃখের মীমাংসা হবে। মানুষ তোমাকে ছোট কাজ করতে দেখে নাক সিটকাতে পারে, কিন্তু যে নাক সিটকায়, দুর্দিনে তার কাছে একটা পয়সা চেয়ো, দেখবে সে কেমন করে তোমার কাছ থেকে সড়ে পড়ে।
কোনো ছোট কাজ করেও যদি জীবনযাত্রা নির্বাহ করা যায় তাও ভালো। কর্মহীন দীন জীবন কত দুঃখের, তার মুখোনি কত করুণ। বৃথা তার জীবন, বৃথা তার মানব সমাজে বাস। মানব জীবনের এই দারুণ অপমান হতে নিজেদের উদ্ধার করতে হবে। নারী-পুরুষ উভয়েরই যেন জীবনের চরম লক্ষ্য হয় এই।
উপরে খোদা আর নিচে তুমি, মানুষের চেয়ে খোদার সঙ্গে তোমার সম্বন্ধ বেশি, কত মানুষ এ জগতে এসেছিল- কোথায় তারা? খোদা চিরকাল আছেন- তোমার। জীবনের হিসাব তারই সঙ্গে হবে। যে দাম্ভিক ও অহঙ্কারী, সে তোমায় ঘৃণা করে মানুষের চোখ মুখে উল্লাসের হিল্লোল তুলেছে- সে কয়দিন বাঁচবে?
মানুষের উপহাসকে ভয় করে অন্যায় করে জীবনকে বড় করে তুলবার কোনো দরকার নাই, মানুষ তোমাকে সম্মান করে বড় আসন দিক আর না দিক, কোনো ক্ষতি নাই- দাম্ভিক ধনবান মানুষের সঙ্গে সম্বন্ধ তোমার খুব অল্প।
এরূপ মানুষের কাছ থেকে তুমি ফিরে এস। যা উচিত সেই পথ অনুসরণ করলে শত রকমে জীবনকে বড় করে তোলা যায়। ফর্সা কাপড় পরে ভদ্রলোকের কাছে সম্মান বজায় রাখবার জন্য নিজের মনুষ্যত্বকে নষ্ট করে ফেলো না।
সে তোমাকে অপমান করে তৃপ্তি লাভ করেছে, বিশ্বাস কর তার চেয়ে সুখের জীবন তোমার- তুমি অন্যায় করো না, তোমার জীবনে কোনো পাপ নাই, তোমার ছেলেগুলি অন্যায়ের পয়সায় বেঁচে নাই- সতী সাধ্বী পত্নী তোমার ঘরে- তুমি তো রাজা।
জীবনের অপমান হয় দুটি জিনিসে- প্রথমত অজ্ঞতায়, দ্বিতীয়ত পর নির্ভরশীলতায়।
অজ্ঞতার ন্যায় মহাশত্রু মানব জীবনে আর নাই। জীবনে যে অবস্থাতে থাক না, তোমাকে জ্ঞানের সঙ্গে যোগ রাখতে হবে। জ্ঞানের চরম সার্থকতা মানুষকে ভালো মন্দ বলে দেওয়া,- তার আত্মার দৃষ্টি খুলে দেওয়া, তার জীবনের কলঙ্ক-কালিমাগুলি ধুয়ে ফেলা।
অর্থ আছে বলে বা কাজের অজুহাতে যাদের জ্ঞানের সঙ্গে সম্বন্ধ থাকে না, অজ্ঞাতসারে নিজদেরকে পতিত করে। দাম্ভিকতা ও অর্থে প্রভাব তাদের মনুষ্যত্বকে খর্ব করে দেয়। দরিদ্রতম-দরিদ্র অপেক্ষা যে হতভাগ্যের অলস কর্মহীন জীবন অন্যের উপর নির্ভর করে, তার অবস্থা অধিকতর শোচনীয়। এতে মনুষ্যত্বকে একেবারেই চূর্ণ করে ফেলা হয়।
জীবনে সকলের চেয়ে উচ্চ লক্ষ্য হবে, তোমাকে জীবনে যেন পরের দয়ার উপর নির্ভর না করতে হয়, কোনো সময়ে যেন মানুষের সামনে তোমার মন সঙ্কুচিত না হয়ে ওঠে। তোমার মাঝে যে বিবেক-বুদ্ধি আছে, তাকেই যেন তোমাকে ভয় করতে হয়।
কোনো ছোট কাজ করেও যদি জীবনযাত্রা নির্বাহ করা যায় তাও ভালো। কর্মহীন দীন জীবন কত দুঃখের, তার মুখোনি কত করুণ। বৃথা তার জীবন, বৃথা তার মানব সমাজে বাস। মানব জীবনের এই দারুণ অপমান হতে নিজেদের উদ্ধার করতে হবে। নারী-পুরুষ উভয়েরই যেন জীবনের চরম লক্ষ্য হয় এই।
যে ন্যায় ও সত্যের অপমান করে, মানুষকে ভয় করে, তার উপাসনার কোনো মূল্য হয় না। যে মানুষের কাছে নিজের আত্মাকে বিক্রয় করেছে, তার আত্মায় খোদার আসন হবে না। আত্মার উপর আল্লাহ ও ন্যায়-সত্য ছাড়া আর কারো প্রভাব যেন না পড়তে পারে।
ডেপুটি সাহেব, দারোগা বাবু, উকিল বাবু আমাকে সম্মান করে না। তাতে আমার . কিছু আসে যায় না; পল্লীর অজ্ঞাত- দুঃখিনী বিধবা আমার নাম করে চোখের জল ফেলে, সর্বহারা নিঃসহায় দরিদ্র বুড়ো ডেকে আমার কুশল জিজ্ঞাসা করে, তরুণ যুবকটি আমার স্নেহ নেবার জন্যে আমার কাছে আসে- ঐ আমার ঢের।
যে কোনো হীন ব্যবসা করা ভালো তবু বাইরে চাকচিক্য বজায় রাখবার জন্য অন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করা ঠিক নয়। তোমার পত্নীর পরনে ভাল শাড়ি, তার গায়ে সোনার গহনা দেখে নর-নারী প্রশংসাপূর্ণ বিনীত দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে থাকবে তোমার ভালো ঘোড়াটি, তোমার দাস-দাসী ও খানসামা-পেয়াদা দেখে হয়তো তোমার মন অহঙ্কারে ভরে উঠবে-
তোমার অসত্য জীবনের, তোমার দীন হৃদয়ের খবর তোমার পত্নীর কাছে হয়তো ঢাকা আছে; মানুষও তা জানে না। কিন্তু তুমি তো জান? তোমার মনুষ্যত্বের কাছে তো এ কেলেঙ্কারী অবিদিত নাই। মানুষের এই প্রশংসার দৃষ্টি ঘৃণায় প্রত্যাখ্যান কর, তোমার এই অনুভূতি একেবারে চূর্ণ করে দাও।
আত্মাকে অবনমিত করে কে কুকুরের মতো দেহটিকে বাঁচাতে চায়, আত্মাকে পতিত করে ধর্ম জীবনকে ঠিক রাখা যায় না- এ যদি মানুষ না বোঝে, তবে সে কী প্রকার মানুষ? কোন ধর্মের লোক সে? কোন্ মহাপুরুষের দীক্ষা সে লাভ করেছে, অর্থ ও রুটির জন্য দীন-ভিক্ষুক হয়ে মানুষকে সালাম করতে হবে, এর চেয়ে বড় লজ্জা, বড় অপমান জীবনে আর কী আছে?
আমি মানুষ, এ জগতে আমার বাঁচার অধিকার আছে। তোমার ইচ্ছা হয়, আমাকে সম্মান করনা হয় করো না, ও আমি ভিক্ষা করে নিতে ইচ্ছুক নই। আমি কারো মনে অন্যায় করে আঘাত দিতে চাই নে। আমি দীনাতিদীন, তাই বলে মানুষের পদলেহন করা আমার কাজ নয়- যা সত্য বলে বুঝি, তাই আমি করবো- মানুষের সত্য গ্রহণের জন্য আমার আত্মা উন্মুখ।
আমি যা বুঝি তাই অভ্রান্ত সত্য- এ কথা আমি বলি না। আত্মা আমার স্নেহ-করুণায় ভরা, আমি প্রতিবেশীর ক্ষতি করি না। আমার নয়নে জল আসে, আমার কথা ও কাজের মধ্যে কোনো অসামঞ্জস্য নাই। আমি মিথ্যাবাদী নই, আমি খুব সতর্কতার সঙ্গে কথা বলি, পাছে আমার কথায় কোনো অশুভ হয় এই ভয়ে; দেশকে ভালবাসি বলে সময়াভাবে নিরন্ন প্রতিবেশী ও দীন-দরিদ্রের কথা আমি ভুলি না, জাতির স্বাধীনতা চাই বলে দুর্বলকে আমি রূঢ় কথা বলি না;
আমার বেশি বুদ্ধি আছে বলে আমি আমার বোকা প্রতিবেশীর সঙ্গে অসদ্ব্যবহার করি নাই, আমি কখনও মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করি না, ঋণ পরিশোধ করতে আমি ইতস্তত করি না- আমি স্বাধীনচিত্ত কৃষক, আমি নিজের হাতে লাঙ্গল চষি, জগতের পণ্ডিতমণ্ডলীর সঙ্গে আমার যোগ আছে; জিজ্ঞাসা করি কে আমাকে ছোট বলে?
ডেপুটি সাহেব, দারোগা বাবু, উকিল বাবু আমাকে সম্মান করে না। তাতে আমার . কিছু আসে যায় না; পল্লীর অজ্ঞাত- দুঃখিনী বিধবা আমার নাম করে চোখের জল ফেলে, সর্বহারা নিঃসহায় দরিদ্র বুড়ো ডেকে আমার কুশল জিজ্ঞাসা করে, তরুণ যুবকটি আমার স্নেহ নেবার জন্যে আমার কাছে আসে- ঐ আমার ঢের।
মানুষের আত্মা ফেলে দেবার জিনিস নয়। জ্ঞান-চর্চার দ্বারা তোমার আত্মার ঘুমন্ত শক্তিকে জাগিয়ে তোল। মানুষ যে কত বড়, সে কেমন বড় ও সম্মানী হতে পারে, তা হয়তো সে জানে না, তাই সে সম্মানের জন্য মানুষের দুয়ারে যায়, পথে আবর্জনার দামে তার অমূল্য রত্ন বিক্রয় করে।- পরিতাপ!
আমি কারো কাছে কোনো সম্মান চাই না, কোনো বড় আত্মীয় আমার নাই, চেয়ারে আমি বসি না, যাদের পেট ভরা ভাত আছে, তাদেরকে খাইয়ে আমি নাম ক্রয় করি না- আমার পত্নীর গায়ে বহু গহনা নাই, আমার ছেলেরা চাকরের সঙ্গে তুই তুই করে কথা বলে না।
কাজ করলে অসম্মান হয়?- অসম্মান হয় মূর্খ হয়ে থাকায়, পাপ জীবনে, আত্মার সঙ্কীর্ণতায়। জীবনকে কলঙ্কিত করে লোকের সঙ্গে উঁচু মুখ করে কথা বলতে কি লজ্জা হয় না- তঙ্করকে আত্মীয় বলে পরিচয় দিতে তোমার মনে ঘৃণাবোধ হয় না?
কাজ করতে কোনো লজ্জা নাই। পবিত্র সন্তুষ্ট মন নিয়ে পরিশ্রম কর, তোমার জীবনে সোনা ফলবে। হৃদয়ে আশা পোষণ করে কাজ করাতে কত আনন্দ পাওয়া যায়। দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ কেমন করে কাজ করে। যুবক বয়সে নিষ্কর্ম জীবন যাপন করা খুবই বিপজ্জনক।
মেয়েদের পক্ষে আরও বিপজ্জনক। কাজ নাই কর্ম নাই- অনবরত শুয়ে। বসে থাকলে মাথায় হাজার তরল চিন্তা আসে। জীবনে তরল চিন্তার ধাক্কা সামলান বড় কঠিন। যার মাথায় একবার তরল চিন্তা ঢুকেছে, তার আর রক্ষা নাই- অধঃপতন হবেই।
টাকা-পয়সার অপব্যবহার করলে লোকে অমিতব্যয়ী লক্ষ্মীছাড়া বলে, সময়ের অপব্যবহার যে করে সে অমিতব্যয়ী। সময়ের সদ্ব্যবহার কর- সময়ের আর এক নাম সম্পদ, লেখাপড়া শিখে চাকুরি করা ছাড়া কি জীবনের আর কোনো ব্যবহার নাই। কামারের লোহার কাজ, টুপি তৈরি, পুস্তক বাঁধাই, কল-কারখানার কাজ, কাপড় তৈরি ও কাঠের কাজ, খেলনা তৈরি, লণ্ঠন ও ছড়ি তৈরি প্রভৃতি বহু শিল্প তুমি শিখতে পার।
শিল্প জাতির গৌরব- শিল্প দেশকে সৌন্দর্য ও সম্পদে পূর্ণ করে ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নত দেশগুলি তার প্রমাণ। ভারতবর্ষ কৃষিপ্রধান দেশ; এখানে মাটি হতে সোনা ফলান যায়। মাটির ফসল হতেই জীবনের অভাব পূরণ হল, তা হলে মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সমস্যার ভার হতে তুমি মুক্ত হলে।
বিদেশী বিলাদ্রব্য কিনে, নিত্য নূতন অভাব সৃষ্টি করে, জীবনের দৈন্য না বাড়িয়ে নির্বিবাদে পল্লীর নির্জন প্রান্তে বসে জীবনের শত রহস্যের সন্ধানে জীবনকে ব্যাপৃত রাখ, বিশ্বের চিন্তাশীল পণ্ডিতমণ্ডলীর লেখা পাঠ করে নূতন নূতন কলকারখানা উদ্ভাবনে মনোনিবেশ কর,- বিজ্ঞান আলোচনা কর, তোমার চিন্তা তোমার জ্ঞান জাতিকে দান কর।
তোমার চারিদিকে যে সমস্ত জাতি বড় আসনে উপবিষ্ট রয়েছে, এদের বড় হবার মূলে কত পণ্ডিতের চিন্তা বিদ্যমান। কয়েকটি টাকার জন্যে ভিক্ষুক জীবনের অভিশাপ নিয়ে তোমার আত্মাকে বিনষ্ট করে ফেলো না। তোমার ভিতরে কত বড় শক্তি সম্ভাবনা ঘুমিয়ে রয়েছে তা হয়তো তুমি জান না!
মানুষের আত্মা ফেলে দেবার জিনিস নয়। জ্ঞান-চর্চার দ্বারা তোমার আত্মার ঘুমন্ত শক্তিকে জাগিয়ে তোল। মানুষ যে কত বড়, সে কেমন বড় ও সম্মানী হতে পারে, তা হয়তো সে জানে না, তাই সে সম্মানের জন্য মানুষের দুয়ারে যায়, পথে আবর্জনার দামে তার অমূল্য রত্ন বিক্রয় করে।- পরিতাপ!
মানুষের বুকের ভিতরে কী শক্তি লুকিয়ে আছে, তাকে জাগ্রত কর, সে অসাধ্য সাধন করবে। তাকে বলে দাও, সে অফুরন্ত শক্তির মালিক। কেন সে ছোট হয়ে আছে?- নিজের সিংহাসন সামনে রেখে কেন সে ভয়ে ভয়ে এদিকে-ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে? তুমি ছোট, তুমি হীন?
(চলবে…)
<<মহৎ জীবন : পর্ব তিন ।। কাজ : পর্ব দুই>>
………………..
মহৎ জীবন -লুৎফর রহমান।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
………………….
আরও পড়ুন-
মহৎ জীবন : পর্ব এক
মহৎ জীবন : পর্ব দুই
মহৎ জীবন : পর্ব তিন
কাজ : পর্ব এক
কাজ : পর্ব দুই
কাজ : পর্ব তিন
কাজ : পর্ব চার
ভদ্রতা : এক
ভদ্রতা : দুই
……………………
আরও পড়ুন-
মহামানুষ … মহামানুষ কোথায়
মহিমান্বিত জীবন
মহামানুষ
যুদ্ধ
স্বাধীন গ্রাম্যজীবন
আত্মীয়-বান্ধব
সত্য প্রচার
নিষ্পাপ জীবন
উপাসনা
নমস্কার
তপস্যা
তীর্থ-মঙ্গল
আত্মার স্বাধীনতার মূল্যবোধ
মনুষ্য পূজা
মন্দতাকে ঘৃণা
……………………….
আরও পড়ুন-
মানব-চিত্তের তৃপ্তি
আল্লাহ্
শয়তান
দৈনন্দিন জীবন
সংস্কার মানুষের অন্তরে
জীবনের মহত্ত্ব
স্বভাব-গঠন
জীবন সাধনা
বিবেকের বাণী
মিথ্যাচার
পরিবার
প্রেম
সেবা
এবাদত