ভবঘুরেকথা
সূফীবাদের গোড়ার কথা সুফি সাধক রুমি

মানব-চিত্তের তৃপ্তি

-লুৎফর রহমান

মানব-চিত্তের তৃপ্তি অর্থ, প্রাধান্য; ক্ষমতা এবং রাজ্যলাভে নাই। আলেকজাণ্ডার সমস্ত জগৎ জয় করেও শান্তি লাভ করেন নাই। মানুষ অর্থের পেছনে ছুটছে- অপরিমিত অর্থ দাও তাকে, সে আরও চাবে। তার মনে হয় আরও পেলে সুখী হবে। সমস্ত জগৎ তাকে দাও : তবুও সে সুখী হবে না।

জাগতিকভাবে যারা অন্ধ, তারাই জীবনে সুখ এইভাবে খোঁজে। দরিদ্র যে, সে আমার জীবন ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে ঈর্ষা করছে, সে আমার অবস্থার দিকে কত উৎসুকনেত্রে তাকিয়ে থাকে কিন্তু আমি নিজে কত অসুখী। পরম সত্যের সন্ধান যারা পায় নাই, মানব-হৃদয়ের ধর্ম কি, তা যারা বুঝতে পারে নাই- তারাই এইভাবে জ্বলে-পুড়ে মরে, এমন কি এই শ্রেণীর লোক যতই মৃত্যুর পথে অগ্রসর হতে থাকে, ততই এদের জীবনের জ্বালা বাড়ে।

প্রতিহিংসা-বৃত্তি, বিবাদ, অর্থ-লোভ আরও তীব্রভাবে তাদেরকে মত্ত ও মুগ্ধ করে। তখনও তারা যথার্থ কল্যাণের পথ কী, তা অনুভব করতে পারে না। জীবন ভরে যেমন করে সুখের সন্ধানে এরা ছুটেছে, মৃত্যুর অব্যবহিত পরেও তেমনি তারা সুখের সন্ধান করে- পায় না, এই পথে মানুষ সুখ পাবে না।

আত্মার এই সিদ্ধির জন্যই ধর্মের যাবতীয় বিধি-বন্ধনে মত্ত থাকলে এবং তাকেই চরম মনে করলে মানবাত্মা বিনষ্ট হবেই!’হাজার নিয়ম পালন ও রোজা উপাসনায় তাকে উন্নত ও উজ্জ্বল করতে পারবে না। জীবনকে আল্লাহর রঙে রঙিন করে তুলতে হবে, সমস্ত চিন্তা, কথা ও কাজের মধ্য দিয়ে সেই সত্য সুন্দর ও সুমহানের গুণকে প্রকাশ করতে হবে।

ক্রোধে তারা চিৎকার করে মানুষকে তারা দংশন করে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের দুখী, আহত-ব্যথিত মন নিজের দেহ এবং পরের অন্তরকে বিষাক্ত করে। বলতে কী, মানুষ জাগতিক কোনো সাধনায় সুখ, আনন্দ এবং তৃপ্তি পাবে না। এই পথ থেকে মানুষকে ফিরতে বলি; সমস্ত মহাপুরুষই এই কথা বলেছেন। মানুষ তার জীবনকে অনুভব করতে পারে নাই; শয়তান মানুষ- চিত্তকে ধর্মের নামে ভ্ৰমান্ধ করেছে।

সত্যের সাধনাই মানব হৃদয়ের চরম ও পরম সাধনা। পরম সত্যকে দিনে দিনে জীবনের প্রতি কাজের ভিতর দিয়ে অনুভব করাই মানুষের শ্রেষ্ঠ সাধনা। কত বিচিত্রভাবে তাকে অনুভব করতে হবে তার ইয়ত্তা নাই। যিনি যতটুকু এই পরম সত্যকে অনুভব করতে পেরেছেন তিনি তত বড় সাধক, সন্ন্যাসী এবং ফকির।

জগতে যা কিছু কর, যত কাজেই যোগ দাও, পরিবার প্রতিপালন কর, শিশুর মুখে চুম্বন দাও- মানব-চিত্তের এই একমাত্র গুরুতর সাধনা ও আকাক্ষা এর মধ্যেই প্রচ্ছন্ন রয়েছে। সত্যময় আল্লাহতায়ালাকে হৃদয়ে ধারণ করা, তাতে মিশে যাওয়া, আল্লাহময় হয়ে যাওয়া- সর্বপ্রকারের সত্য, সুন্দর, মধুর ও পূর্ণ হয়ে ওঠা- এই-ই চরম এবাদত।

আত্মার এই সিদ্ধির জন্যই ধর্মের যাবতীয় বিধি-বন্ধনে মত্ত থাকলে এবং তাকেই চরম মনে করলে মানবাত্মা বিনষ্ট হবেই!’হাজার নিয়ম পালন ও রোজা উপাসনায় তাকে উন্নত ও উজ্জ্বল করতে পারবে না। জীবনকে আল্লাহর রঙে রঙিন করে তুলতে হবে, সমস্ত চিন্তা, কথা ও কাজের মধ্য দিয়ে সেই সত্য সুন্দর ও সুমহানের গুণকে প্রকাশ করতে হবে।

(চলবে…)

 

<<ভদ্রতা : দুই ।। আল্লাহ্>>

………………..
মহৎ জীবন -লুৎফর রহমান।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………………….
আরও পড়ুন-
মানব-চিত্তের তৃপ্তি
আল্লাহ্
শয়তান
দৈনন্দিন জীবন
সংস্কার মানুষের অন্তরে
জীবনের মহত্ত্ব
স্বভাব-গঠন
জীবন সাধনা
বিবেকের বাণী
মিথ্যাচার
পরিবার
প্রেম
সেবা
এবাদত

………………….
আরও পড়ুন-
মহৎ জীবন : পর্ব এক
মহৎ জীবন : পর্ব দুই
মহৎ জীবন : পর্ব তিন
কাজ : পর্ব এক
কাজ : পর্ব দুই
কাজ : পর্ব তিন
কাজ : পর্ব চার
ভদ্রতা : এক
ভদ্রতা : দুই

……………………
আরও পড়ুন-
মহামানুষ … মহামানুষ কোথায়
মহিমান্বিত জীবন
মহামানুষ
যুদ্ধ
স্বাধীন গ্রাম্যজীবন
আত্মীয়-বান্ধব
সত্য প্রচার
নিষ্পাপ জীবন
উপাসনা
নমস্কার
তপস্যা
তীর্থ-মঙ্গল
আত্মার স্বাধীনতার মূল্যবোধ
মনুষ্য পূজা
মন্দতাকে ঘৃণা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!