ভবঘুরেকথা
নিজেকে জানো মায়া সুফি ধ্যান চক্র

ঈশ্বরের রাজ্য বিস্তার

-লুৎফর রহমান

ভক্তের জন্যে ঈশ্বরের রাজ্য বিস্তারই ধর্মকার্য। প্রত্যেক মুসলমান ঈশ্বরের সৈনিক। সে প্রভুর পতাকা বহন করবে এবং তার রাজ্য বিস্তার করবে।

ঈশ্বর রাজ্যের ভাব কী? ঈশ্বর রাজ্যে অশান্তি, দুঃখ এবং কোনো শয়তানী ভাব কর্তৃত্ব করবে না। ঈশ্বর রাজ্য অর্থ স্বর্গ। এই জগৎকে স্বর্গে পরিণত করতে হবে। ইহাই ধার্মিকের কাজ। এই জগৎ হবে পরম শান্তি ও আনন্দের স্থান। এখানে পাপ থাকবে না-

দুঃখ, দীর্ঘশ্বাস, নিরানন্দ, বেদনা, অত্যাচার, অবিচার, নির্যাতন, অন্ধকার থাকবে না, এরই নাম ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপন। জগৎ যতই পাপ মুক্ত হবে, ঈশ্বরের রাজ্য ততই বিস্তার লাভ করবে, প্রভুর এই কার্যে জীবন দান কর- এরই নাম ঈশ্বরের নামে কোরবানি।

হে প্রভুর সৈনিকেরা, এই জন্যেই প্রভুর কাছে জীবন্ত প্রার্থনা করতে হবে। মৃতের ন্যায় মৃত প্রার্থনা করো না।

নারী ক্রন্দন যেন আকাশকে ব্যথিত না করে। সাবধান! তাকে স্বামী, চক্ষু এবং স্বাধীনতা দাও। তার বংশ তুলে গালি দিও না। এতে ব্যভিচার হয়- মহাপাপ হয়।

ঈশ্বরের রাজ্য মধ্যে যার অন্তরে বেদনা জাগে না, পৃথিবীতে শয়তানের কর্তৃত্ব সম্মানে যার মন দুঃখিত হয় না- সে ঈশ্বরের কেউ নয়।

সংগ্রাম অর্থ শরীরের বল, তরবারি জ্ঞান, বক্তৃতা, সাহিত্য, উপন্যাস, কাব্য ও অভিনয় দ্বারা পাপের বিরুদ্ধে, শয়তানের বিরুদ্ধে, নর নারীর প্রাণে ঘৃণা সৃষ্টি করা- কুৎসিতের বিরুদ্ধে মানুষকে বিদ্রোহী করে তোলা। মানুষ সুন্দর, কল্যাণ, সত্য এবং মঙ্গলের উপাসক হোক, এই-ই ধর্ম।

প্রভুর অপমানে, সত্যের পরাজয়ে, শয়তানের প্রতাপে যদি প্রাণে বেদনার সঞ্চার না হয়- তোমার তীর্থ ভ্রমণ, নামাজ, কোরান পাঠ, কোরবানি কোনো ধর্মক্রিয়ায় ফল হবে না।

শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র তার কর্ণকুহরে এই মহামন্ত্র দাও ‘আল্লাহু আকবর’। আল্লাহ্ই শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ যা সত্য ও ন্যায়, যা সুন্দর এবং মঙ্গল, তাই মুসলমানের একমাত্র আরাধনার বস্তু। জীবনে তার একমাত্র উপাস্য ন্যায় ও সত্য। যা উত্তম, সত্য, মঙ্গল, শৃঙ্খলা প্রেমময় শক্তি ভাব, সীমার অতীত মহাজীবন, পরম শান্ত, পরম আনন্দ তাই পূজিত।

ঈশ্বর জগতের জীবন। শয়তান পরম দুঃখের সর্ববিধ অনুষ্ঠাতা। সে ঈশ্বরের রাজ্য ধ্বংস করে, ঈশ্বরের প্রিয়তম সৃষ্টি মনুষ্য হৃদয়ে পাপের বিষ ঢালে, তাকে প্রলোভনে মুগ্ধ করে সমস্ত দুঃখ ও নরকের পথে আহ্বান করে- প্রভুর রাজ্যে সর্বনাশ সাধন, তার সৃষ্টিকে ধ্বংস করাই তার কাজ।

সে মানুষকে, মনুষ্য সমাজকে প্রতি মুহূর্তে কুমন্ত্রণা দিয়ে উদভ্রান্ত করে। মনুষ্য মধ্যে যারা তার অনুগামী, কার্যে যারা তার ভক্ত, যারা কদাচারী, হীনচিত্ত, মূঢ়, মানুষকে যারা দুঃখ দেয়, মুখে আনুগত্য স্বীকার করলেও কার্যে যারা শয়তানকে সেজদা করে, সেই বিধর্মী দুরাচার মানুষের দল শয়তানেরই অনুচর।

ধীবর যেমন মৎস্য ধরে, ঈশ্বরের সৈনিকেরা, যাবতীয় বিশ্বাসীরা যারা ঈশ্বরের গৌরব করেন- তারা শয়তান ও তার অনুচরদের বিরুদ্ধে চিরজীবন যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে জয়ী হয়ে সৈনিকেরা প্রভুর শান্তির রাজ্য বিস্তার করেন। শয়তানের মাথা নত হোক। পরাজয়ের গ্লানিতে তার মুখ মলিন হোক।

এস, আমরা প্রভুকে এবং তার রাজত্বে উল্লাসিত হই এবং আনন্দ করি। প্রভুর জন্যে যুদ্ধে যদি আমরা মরি, সে আমাদের শহীদের মৃত্যু হবে। আমাদের যে সব ভ্রাতা ও ভগ্নি শয়তান এবং তার সেনাপতি ও সেনাদলের কাছে বন্দি হয়েছেন, তাদের উদ্ধার করি। এই তো আমাদের কাজ শয়তানের সঙ্গে ঈশ্বরের এবং তার সৈনিকদের সন্ধি অসম্ভব।

প্রভুর সংবাদ বহন

চল যারা পথহারা, পতিত, অশিক্ষিত, ঈশ্বরবর্জিত, পাপের অন্ধকারে ডুবে আছে; যেখানে আল্লাহর নাম কেউ লয় না- যেখানে আল্লাহর কথা কেউ ভাবে না- সেখানে যাই এবং আল্লাহর মহাবাণী শুনাই। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, এই-ই ধর্ম।

এছাড়া কোনো উচ্চতর ধর্ম নাই। শুধু রোজা, নামাজ, কোরবানি কোনো ধর্ম নয়। ওরে পাগল, ভ্রান্ত, কীভাবে জীবন নষ্ট করলে?

নব যুগের, নব জাতির এই নূতন ধর্ম গ্রহণ কর। যদি গ্রহণ না কর তোমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মিথ্যা ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে আপন ধর্ম জীবনের সর্বনাশ সাধন করো না। পশুর ধর্ম পালন করো না, বর্বর, মূর্খের ধর্ম পালন করো না- মানুষের ধর্ম পালন কর।

সত্য ও সুন্দরের পূজারী হও।- সত্যের বাক্যের অন্ত নেই- প্রভুর বাক্য সত্যের বাক্যরূপে অনন্তকাল ধরে মানব জাতির কাছে থাকবে, সময় ও কালের উপযোগী হয়ে তাকে অশ্রদ্ধা করো না- প্রভুর বাণী গ্রহণ কর।

সেই পল্লীর সকল মানুষের ভার তার উপর দাও। তোমরা তার সাংসারিক অভাব পূর্ণ কর। প্রভুর প্রচার কার্যে তোমরা প্রত্যেকে কিছু কিছু দান কর- প্রভুর পথে দান ব্যতীত তোমাদের নামাজ কখনও সিদ্ধ হবে না। প্রভুর বাণী প্রচারে, দরিদ্রদের সাহায্যে, শিক্ষা বিস্তারে, হাসপাতাল প্রভৃতি মহৎ প্রতিষ্ঠানে যে দান করা হয়, তা প্রভুর পথে দান। দানবর্জিত শুষ্ক রোজা-নামাজের কোনো মূল্য নাই। তা লবণহীন ব্যঞ্জনের ন্যায় অপ্রিয়।

প্রভু বলেছেন, পতিত, মূর্খ, অবোধ, পৌত্তলিক, জ্ঞানহীন, পথহারা, ধর্মহীন, পাপ ব্যবসায়িনী নারীকুল, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভ্রান্ত নর-নারীর কাছে যাও। তাদের ভিতরে যেয়ে নামাজ পড় এবং প্রভুর শুভ ইচ্ছা জ্ঞাপন কর- মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পূজারী হতে বল- তাদের মধ্যে বিদ্যালয় স্থাপন কর, তাদের মধ্যে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার কর। পতিত মানুষের জন্য তুমি দায়ী।

বাংলার সহস্র সহস্র নারী বেশ্যাবৃত্তি করছে- এ মহাপাপ যে দেশে হচ্ছে সেখানে কি আল্লাহর এবাদত সিদ্ধ হয়? হায়! নারীর অনুষ্ঠিত এই পাপ ব্যবসা কি চোখে দেখা যায় বা কানে শোনা যায়? এ যে একে বারে অসহ্য ব্যাপার। এদের সাবধান করবার জন্যে কি মুসলিম সন্তানদের কিছু করবার নেই? নিশ্চয়ই আছে।

পতিত ভ্রান্ত মানুষ চন্দ্র, সূর্য, প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তি, বৃক্ষ, পাহাড়, সর্প, বরাহকে ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা করছে। এদের উদ্ধারের জন্যে কী তোমার কিছু করবার নেই? দেশের শত শত মানুষ ধর্মহীন জীবন যাপন করছে, ঈশ্বর-হীন জীবন কাটাচ্ছে- এদের কাছে কিছু বলবার নেই আমাদের?

নিজের উন্নতির চেষ্টায় সারা জীবন ব্যয় করলে। নিজের পুত্রের জন্য টাকা রেখে যাচ্ছ। হয়তো ভবিষ্যতে তোমার টাকা তারা মদ খেয়ে উড়াবে। প্রভুর প্রচারের পথে তোমার অর্থ ব্যয় কর- এইভাবে তোমার সঞ্চিত ধন পবিত্র কর। হায়, জীবন শেষ হয়ে গেল, তবু ধর্ম কী তা বুঝতে পারলে না।

যাও, সর্বত্র- অন্ধকারে, অলিতে গলিতে প্রভুর আলো জ্বালো।- দিকে দিকে প্রভুর বাণী বহন কর।

হে সাহিত্যিক, হে কবি, হে লেখক, তোমাদের অমর লেখনীতে প্রভুর মহিমা ও আলো জ্বলে উঠুক। হে বক্তা প্রভুর বাণী তোমাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হোক। পৃথিবীতে যতগুলি মসজিদ আছে, প্রত্যেক মসজিদ ঘরের ইমাম যিনি- তিনি হবেন শিক্ষিত, সাধু, মসজিদের অন্তর্গত পল্লীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ধার্মিক ব্যক্তি।

সেই পল্লীর সকল মানুষের ভার তার উপর দাও। তোমরা তার সাংসারিক অভাব পূর্ণ কর। প্রভুর প্রচার কার্যে তোমরা প্রত্যেকে কিছু কিছু দান কর- প্রভুর পথে দান ব্যতীত তোমাদের নামাজ কখনও সিদ্ধ হবে না। প্রভুর বাণী প্রচারে, দরিদ্রদের সাহায্যে, শিক্ষা বিস্তারে, হাসপাতাল প্রভৃতি মহৎ প্রতিষ্ঠানে যে দান করা হয়, তা প্রভুর পথে দান। দানবর্জিত শুষ্ক রোজা-নামাজের কোনো মূল্য নাই। তা লবণহীন ব্যঞ্জনের ন্যায় অপ্রিয়।

আল্লাহর আদেশ, নরহত্যা করো না

শুধু কি না বুঝে নামাজ পড়লেই ধর্ম জীবনের কর্তব্য পালিত হল?- কী মিথ্যা বিশ্বাস! না বুঝে নামাজের আবৃত্তি করেই আজ মুসলমানের ছুটি। এই অন্ধ নামাজ-রোজার সার্থকতা কোথায়? ভুল বিশ্বাসই মুসলমান সমাজের পতন এবং সর্বনাশের একমাত্র কারণ।

আল্লাহর আর কোনো আদেশই তার পাষাণ, সংগ্রামহীন কর্মবিমুখ মনে সে অনুভব করে না। সে নামাজই পড়ে, কিন্তু সর্বপ্রকার কুকার্য করে- তার জীবন পশুর মতো বিচারহীন, অতিশয় কুৎসিত- অতিশয় মন্দ।

খুন কারা করে? প্রতিশোধ কারা নেয়? ব্যভিচার কে করে? মিথ্যা কথা কারা বলে? অল্প ওজনে জিনিস কারা দেয়? দোকানে রূঢ় কথা বলে ক্রেতাকে কারা অপমান করে? নারীর সম্পত্তি কারা হরণ করে? এতিমের সম্পত্তি কারা ভোগ করে? যেখানে যেখানে ধর্ম জীবনের পরীক্ষা সেখানেই মুসলমান অপারগ, অসমর্থ এবং গোনাহগার।

কোরান, সূরা বকর ১৭৬ নম্বর আয়াত (বাক্য)—“পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ করলে পূণ্য হয় না। যে কেউ ঈশ্বরের ও শেষ বিচারে দিনে, স্বর্গের দূতগণে, সমস্ত অবতীর্ণ ঐশ্বরিক গ্রন্থে এবং নবীগণে বিশ্বাসী (এই সবের অস্তিত্ব সম্বন্ধে আন্তরিক বিশ্বাস পোষণ করে)

দারিদ্রে তার ধৈর্য কৈ? একটু উপায়ের পথ পেলে সে দুই হাত দিয়ে লুট করতে থাকে। ক্ষমতা পেলে সে দারিদ্রের উপর জুলুম করে। বিশ্বাসঘাতকতা তার ধর্ম। দারিদ্র্যে সে ছলনা, প্রতারণা, মিথ্যার আশ্রয় নেয়। সততাতার কাছে নাই।

এবং তাঁর প্রেমে আত্মীয় ও অনাথদের (নিঃসহায়) ধন প্রদান করে, জাকাত দান করে প্রতিজ্ঞা পালন করে, দারিদ্র্যে, পীড়ায় ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যশীল হয়- তারা সত্য কথা বলিয়াছে- ঈশ্বরের ভক্ত বান্দা। আল্লাহ্তে যার বিশ্বাস নাই, তার আবার ধর্ম কী? তাঁর আবার জাতি কী?

জিজ্ঞাসা করি, বুকে হাত রেখে বল, আল্লাহতে বিশ্বাস আছে কি?- তার বিদ্যামানতায়, তার প্রেমে, তার ন্যায় বিচারে, তার প্রতাপ ও শক্তিতে, তার নৈকট্যে, তার সর্ব ব্যাপকতায়, বিশ্বাস আছে কী?- একদিন তোমার কৃতকর্মের বিচার হবে, তার ফল তোমার ভোগ করতে হবে- এ বিশ্বাস আছে কি?

তোমাকে ‘কাফের’ ছাড়া আর কী বলি? তুমি ধর্মহীন গুরু। তুমি ঈশ্বরের দূতগণের অস্তিত্ব বিশ্বাস কর? তুমি কি অনাথ, দরিদ্র নিঃসহায় পথিক ও ভিক্ষুককে প্রেম করে থাক?

আজকাল একদল লোক ধর্মপথের পথিক নয়, ভিক্ষার জন্যে পথিক বা মুসাফির। আল্লাহ্ এদেরকে পথিক বলেন নাই। আল্লাহর পথে যারা পর্যটক, তারাই মানুষের সাহায্য দাবি করতে পারে। অশিক্ষিত, অকর্মণ্য, আলস্যপরায়ণ ব্যক্তিরা কখনও আল্লাহর পথের পথিক নয়।

অনাথ যারা, নিঃসহায় যারা তাদের কথা সমাজের একজনও ভাবে না। শুধু দালান দেওয়ার কথা, জমিদারি রক্ষার কথা, আপন পরিবারের সুখ-দুঃখের কথাই মানুষ বলে বলে শেষ করতে পারে না। আল্লাহর আদেশ মানুষের পালন করতে দেখি কৈ?

সময়কালে একটু নামাজ পড়তে দেখি মাত্র! সাহেব বাকি সময় যেন রেগেই বসে থাকেন। কে কবে জাকাত দিয়ে থাকে?- আমি তো একজনকেও জাকাত দিতে দেখি না। মুসলমানকে আল্লাহর কোনো আদেশই পালন করতে দেখি না। শুধু নামাজের আবৃত্তিতেই কোনো কাজ হবে কি?

তাও কেউ কেউ বৎসর শেষে একবারও মাত্র পড়ে। আল্লাহর সমস্ত প্রেরিত ধর্মগ্রন্থে কার বিশ্বাস আছে? কৈ এক কোরান ছাড়া কাউকে তো ইঞ্জিল (বাইবেল), জবুর, তওরাত পড়তে দেখি না। হযরত ঈসাকে তো অনেক মুসলমান গালি দেয়।

কোরানে লেখা আছে- ইঞ্জিলে হেদায়েত ও জ্যোতি আছে। তার সন্ধান তো একজনকে করতে দেখি না! পাছে খ্রিষ্টান হতেই হবে। নইলে মুসলমান হবে কী করে? সে নিজের কোরানই বুঝে না, পড়ে না- তাতে অন্য ধর্মগ্রন্থ, আল্লাহর কোন আদেশটি সে মানে? মুসলমান প্রতিজ্ঞা পালন করে কৈ? তার মতো মিথ্যাবাদী আমি দেখি না।

দারিদ্রে তার ধৈর্য কৈ? একটু উপায়ের পথ পেলে সে দুই হাত দিয়ে লুট করতে থাকে। ক্ষমতা পেলে সে দারিদ্রের উপর জুলুম করে। বিশ্বাসঘাতকতা তার ধর্ম। দারিদ্র্যে সে ছলনা, প্রতারণা, মিথ্যার আশ্রয় নেয়। সততাতার কাছে নাই।

মানুষ মুখে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে, কার্যত সে শয়তানের পক্ষ অবলম্বন করে। তার প্রচারিত ধর্মের সঙ্গে জীবনের ধর্মের সঙ্গতি নাই। এ চালাকি আল্লাহর কাছে ঢাকা থাকে না। আল্লাহ মৌখিক তোষামদ চান না। তিনি দেখতে চান তার বান্দা কাজে তাঁকে। শ্রেষ্ঠ বলে স্বীকার করছে কিনা! স্বীকার করাই হচ্ছে প্রকৃত ঈশ্বরের সম্মান।

আল্লাহর শত আদেশ সে অগ্রাহ্য করে। জীবন ভর সে আল্লাহকে অগ্রাহ্য করে বুড়াকালে কিছুদিন নামাজ নামে অন্ধভাবে আবৃত্তি করে।

ইহকাল, পরকালে কোনো মঙ্গল তার ভাগ্যে হওয়া সম্ভব? তোমরাই বিচার কর।

নামাজের সঙ্গে জীবনকে সত্যময়, নিষ্পাপ, মধুর, ঐশ্বরিক গুণভূষিত, নবী-পন্থী এবং সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে হত্যা করা দূরের কথা, মানব হৃদয়ে বেদনা দেওয়াও মহাপাপ। ঈশ্বরের হাতে প্রতিশোধ নেবার ভার দাও। তোমরা নিজেরা গোপনে মানুষকে হত্যা করো না। ধৈর্যশীল হও এবং প্রার্থনা কর।

আল্লাহর আদেশ, মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না। ভয়ে মিথ্যা পক্ষ সমর্থন করা মহাপাপ। খোদাকেই ভয় কর ন্যায় পক্ষে কথা বল। বড় লোক বলে ভয়ে তার দিক হয়ে কথা বলো না- তা হলে তোমার ঈমানের কোনো মূল্য থাকবে না।

প্রায়ই দেখা যায় মানুষ ক্ষতির ভয়ে, প্রাণের ভয়ে সাংসারিক স্বার্থ নষ্ট হবার ভয়ে, ধনবানের পক্ষে কথা বলে। যথার্থ ধার্মিকের কাজ তা নয়। যা বিবেক, জ্ঞান ও ধর্মসঙ্গত, যা সত্য তা নির্ভীকভাবে প্রকাশ কর। অধার্মিকেরা আত্মীয় ও বলবানের দিকে টেনে কথা বলে।

যেখানে সত্য লাঞ্ছিত হয়, বিচার অপমানিত হয়, সেখানে আল্লাহর অভিশাপ আসে। অন্ধের মতো মৌখিক নামাজ পড়লে, কাজ হবে না। কার্যে, কথায়, ব্যবহারে আল্লাহর মর্যাদা রক্ষা কর। যা আল্লাহ্, তাই সত্য, তাই ন্যায়, তাই বিচার।

God is truth- M.S. Letter Gandi যার গায়ে বল আছে, তার প্রতাপ বেশি যে অর্থশালী, তার পক্ষই মানুষ অবলম্বন করে। ঈশ্বরের পক্ষ মানুষ অবলম্বন করে না। ন্যায় ও সত্যের পক্ষই ঈশ্বরের পক্ষ।

মানুষ মুখে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে, কার্যত সে শয়তানের পক্ষ অবলম্বন করে। তার প্রচারিত ধর্মের সঙ্গে জীবনের ধর্মের সঙ্গতি নাই। এ চালাকি আল্লাহর কাছে ঢাকা থাকে না। আল্লাহ মৌখিক তোষামদ চান না। তিনি দেখতে চান তার বান্দা কাজে তাঁকে। শ্রেষ্ঠ বলে স্বীকার করছে কিনা! স্বীকার করাই হচ্ছে প্রকৃত ঈশ্বরের সম্মান।

যে অন্যায় পক্ষ অবলম্বন করে, মিথ্যাকে সম্মান করে, সে কাফের। সে শয়তানের অনুচর। যায় যাবে যাক প্রাণ, তবুও সত্যকে সমর্থন করব, এই হচ্ছে প্রকৃত বিশ্বাসী বা ঈমানদারের জীবন নীতি।

আল্লাহর আদেশ মিথ্যা কহিও না

ধিক সেই কুকুরকে যে মিথ্যা কথা বলে। জান তো মিথ্যার দ্বারা কত দুঃখ সৃষ্টি হয়। যে কুকুরের কথায় ঠিক নেই, যার প্রতিজ্ঞার ঠিক নেই, তার কোনো ধর্ম নেই।

এক প্রবীণ সম্পাদকের কাছে দুই মাস হেঁটেছিলাম। তিনি প্রত্যেক বারেই বলতেন- আগামী সপ্তাহে আপনার পুস্তকের সমালোচনা বের হবে। তিনি মিথ্যা কথা বলতেন।

পণ্ডিত, বৃদ্ধ, দেশনায়ক,শাসনকর্তা যে কেউ মিথ্যা বলুক, তাকে ভ্রান্ত বলা যায়। সে ব্যক্তি মনুষ্য সমাজের সম্মানের যোগ্য নয়। বাঙালির কথায় ঠিক নাই মিথ্যা বলা তার স্বভাব- অথচ বলে আমরা সুসভ্য জাতি, স্বাধীনতা আমাদের জন্মগত দাবি, আমরা ধার্মিক। আমাদের ধর্মের ন্যায় শ্রেষ্ঠ ধর্ম আর নাই।

বাঙালি যদি রাত্রি ৮টার কথা বলেন। তাতে পরদিন বেলা ৮টায় বুঝায়। আমি মিথ্যাবাদীকে নীচ কুকুর বলি। জীবনে যারা সত্যবান এবং সুন্দর নয়- তাদের কোনো ধর্ম নাই। আলী নামক এক কৃষক আবদুল নামক এক ভদ্রলোককে একদা লোকচক্ষুর অগোচরে গভীর রাত্রিতে পঞ্চাশটি টাকা কর্জ দেন।

না দিলে ভদ্রলোকের বহু সহস্র টাকা ক্ষতি হবার সম্ভাবনা ছিল। আলী কাউকে স্বাক্ষী না করেই সেই নিশীথ রাত্রে ভদ্রলোককে পঞ্চাশ টাকা দিলেন। আলীর এই মহৎ কার্যের বিষয় আর একটি লোক জানতেন, তিনি এক সাধু। এই ঘটনার পর ২/৩ বছর গেল।

আলী আবদুলের কাছে সবিনয়ে আরজ করে বললো- টাকাগুলি ২/৩ মাসের মধ্যে ফেরত দিতে চেয়েছিলেন, তিন বছর হয়ে গেল, আমি এতদিন লজ্জায় চাই নি। আমার কষ্টার্জিত টাকা, আপনাকে কয়েক দিনের জন্যে মাত্র দিয়েছিলাম। একেবারে দেই নাই।

আল্লাহর আদেশগুলি সর্বদা চোখের সামনে দেখে মানুষ মনে করে-সত্যে লাভও নাই, বলও নাই। তা হলে আর কেন বল- ”আল্লাহু আকবর। আর সেই মহাবাণী বলে মাটিতে মাথা রাখ। এ ভণ্ডামি কেন কর। আল্লাহ্ অর্থ সত্য হক, ন্যায়, বিচার, উত্তমতা।

আবদুল বললেন- অপেক্ষা কর। এইভাবে আরও এক বছর গেল। সাধু এই ব্যবহারের কথা শুনে বললেন, আপনার এই মহত্ত্বের প্রতিদান! ছিঃ ছিঃ ছিঃ।

অবশেষে আলীকে রাজদ্বারে অভিযোগ জানাতে হল। একজন সাক্ষী না হলে আইনত কীভাবে ডিক্রি হবে? তাই সেই সাধু বিচারপতির সামনে যেয়ে বললেন- আমি আমার সম্মুখে টাকা দিতে দেখেছি। ফলে মোকাদ্দমার ডিক্রি হল। এই মিথ্যা কথায় দোষ হয়, নাই। অক্ষর পালন ধর্ম নয়।

অনুতপ্ত- সাধু, মহৎ প্রকৃতির ফরাশি দস্যু জিন্ ভালজিনকে ইন্সপেক্টর জাভার্টি ধরতে গেলেন, তখন পথে জনৈক সন্নাসিনী উপবিষ্ট ছিলেন। রাক্ষস ইন্সপেক্টর জিজ্ঞাসা করলেন, মাতা, কোনো লোক এই পথ দিয়া গিয়াছেন? সন্নাসিনী জানতেন, সেই পথ দিয়া জিন ভালজিন ঘরে প্রবেশ করে লুকিয়ে আছেন।

তথাপি ইন্সপেক্টরের অপমান হতে তাকে রক্ষা করবার জন্য অম্লানভাবে কঠিন রূঢ় কণ্ঠে ঘৃণামিশ্রিত স্বরে বললেন- না, এ পথ দিয়ে কেউ যায় নাই। জিন্ ভালজিন আল্লাহর কাছে বহু পূর্বে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে মহাপুরুষ হয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ধর্ষ প্রতিহিংসাপরায়ণ ফরাশি পুলিশ তাকে চিরজীবন দাগী করে রেখেছিল।

যাই হোক সন্ন্যাসিনী মাতার এই মিথ্যা কথা সত্য অপেক্ষা মধুর, পুণ্যজনক এবং সুন্দর। তথাপি জীবনের কাজে মিথ্যা কথা পাপ। যে মিথ্যা বলে সে সমুদ্রে ভাসমান তৃণখণ্ডের মতো- যে ভর সয় না, যার জীবনের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব নাই। মিথ্যাকে আন্তরিক ঘৃণা করবে, এবং যে মিথ্যা বলে তাকেও আন্তরিক ঘৃণা করবে।

জনৈক মৌলবী সাহেব সারারাত্রি নামাজ পড়তেন, অথচ বিচারালয়ে পরিষ্কার মিথ্যা বলতেন। জীবনে পরীক্ষায় যে জয়ী হয় না- তার নামাজের আবৃত্তি করে কী লাভ! অন্ধেরা বুঝে না মানুষ এবং খাঁটি মুসলমান হবার জন্য আল্লাহ্ নামাজ পড়ার আদেশ দিয়ে তাঁর বাণীগুলি দিনের মধ্যে পাঁচবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন যাতে মানুষ সাবধান হয়- সতর্ক হয়।

আল্লাহর আদেশগুলি সর্বদা চোখের সামনে দেখে মানুষ মনে করে-সত্যে লাভও নাই, বলও নাই। তা হলে আর কেন বল- ”আল্লাহু আকবর। আর সেই মহাবাণী বলে মাটিতে মাথা রাখ। এ ভণ্ডামি কেন কর। আল্লাহ্ অর্থ সত্য হক, ন্যায়, বিচার, উত্তমতা।

মুখে যা বল, কার্যে তার বিপরীত সাক্ষ্য দাও। তা হলে কী করে বলি তোমরা ঈমানদার, তোমরা মুসলমান?

শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পরেই তার কর্ণে ‘আল্লাহু আকবর’ এই মহাবাণীর ধ্বনি তোলা হয়। হায়, জীবন ভরই সে কিন্তু এই মহাবাণীর অপমান করে। তার মুখের আর জীবনের কাজে সঙ্গতি কৈ?

প্রতিবেশীকে প্রেম করিও

আল্লাহর আদেশ- প্রতিবেশীকে প্রেম করিও। কৈ আপন প্রতিবেশীর সঙ্গেই তো মুসলমানের বেশি বিরোধ। “আপন ভ্রাতার সঙ্গে প্রথমে সন্ধি কর, অতঃপর মসজিদ ঘরে এস।” মানুষ নিজ প্রতিবেশীকে ঘৃণা করে, ছোট মনে করে- এই তো মুসলমান সমাজের আজ দৈনন্দিন কাজ।

যে ধার্মিক হতে চাও, আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে চাও- সে প্রতিবেশীর সঙ্গে আত্মীয়তা কর। প্রতিবেশী আত্মীয়ের চাইতেও আপন। যে প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ভাব রাখে না- তার ঘরের পার্শ্বে চলাচল বন্ধ করবার জন্যে বেড়া তোলে- তার পক্ষে উচিত নয়, নামাজ ও কোরান পাঠ করা।

প্রতিবেশীর জন্য অন্তরে যার সত্যের আলো জ্বলে না- কলবে (হৃদয়ে) যে ঈশ্বরের বাণীর ধ্বনি শুনতে পায় না- তার আবার রোজা-নামাজ কী? তার আবার ধর্ম কী?

প্রতিবেশীর সুখ-দুঃখের সঙ্গে নিজের সুখ-দুঃখ মিলিত কর। তার সহস্র অপরাধ ক্ষমা। কর। তাকে আপনজন বলে গ্রহণ কর। তোমরা কি শহরবাসী সে প্রতিবেশীকে চেন না- যে প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে না? সে দস্যু, বিধর্মী এবং ব্যাভিচারী, সে তোমার প্রতিবেশী হলেও তাকে বেগানা অর্থাৎ তাকে বিদেশী মনে করবে।

আল্লাহর আদেশ- কারো অনিষ্ট করো না। মানব জীবনের কাছে আল্লাহর এই-ই অন্যতম শ্রেষ্ঠ আদেশ। যে ব্যাক্তি দ্বারা মানুষ দুঃখ পায় না, সেই তো ধার্মিক। ফকিররা পথে কাউকে বেদনা দেন না, আর তুমি নরাধম, গায়ের জোরে নিত্য মানুষকে কত দুঃখ দিচ্ছ!

অপেক্ষা কর আল্লাহর শাস্তি তোমার চক্ষুকে অন্ধ করবে, তোমার বাহু শক্তিহীন হবে, তোমার পা অবশ হয়ে যাবে- তোমার নিকট আত্মীয় বিনষ্ট হবে। হে অবোধ, সাবধান হও। আল্লাহর শাস্তি নিকটবর্তী।

আল্লাহর আদেশ-ব্যভিচার করো না

হায় কী সর্বনাশের কথা! বাংলার পথ-ঘাট ব্যভিচারের পাশে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে- ব্যভিচারের উৎসব চলছে। আল্লাহর গজব এসে বাংলাদেশ এবং পৃথিবীকে নিশ্চয় ধ্বংস করবে। কেন ব্যভিচার কর? আল্লাহ্ কি তোমাদের বিবাহিত হতে নিষেধ করেছেন?

হে দেশের সাহিত্যিকগণ, হে সমাজ-সংস্কারক, হে দেশ-সেবক, হে সম্পাদক তোমরা দেশে ব্যভিচারের বিরুদ্ধে তোমাদের আপন আপন শক্তি প্রয়োগ কর। এই কাজের জন্য একদল নারী মুক্তিসেনা প্রয়োজন। পতিত নারী বিষ এবং আগুনস্বরূপ- ওদের কাছে পুরুষ মানুষের যেতে নেই।

বাংলার ব্যভিচারের জন্য হিন্দু সমাজই দায়ী বেশি- হায় এ মহা পাপের ভার ধরণী সহ্য করতে। পারে না। ওগো মা, ওগো জননী! তোমাদের পায়ে ধরি, ব্যভিচার করো না যদি অন্নের কাঙাল হয়ে বস্ত্রহীন হয়ে তোমরা ব্যভিচার করতে বাধ্য হয়ে থাক, তবে হে মুসলমান সমাজ, নামাজ বন্ধ করে ব্যভিচারিণী পাপ ব্যবসায়িনী নারী সমাজকে অন্ন, বস্ত্র এবং আশ্রয় দাও।

এ পাপ যত দিন বন্ধ না হবে ততদিন তোমাদের নামাজ হবে না। কিছুতেই না। মুসলমান তুমি কি মরে গিয়েছ? তোমরা বেঁচে থাকতে আল্লাহর এত অপমান? এ পাপ কি চোখে দেখা যায়! হায়! হায়! কী হল। নারীদেহের কী দুর্গতি!

হায়, বাংলার যুবক সমাজ, হে কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, ধনী, তোমরা ব্যভিচারের পাপকে প্রশ্রয় দিও না। এর মতো মহাপাপ আর নাই। এর ফল ইহকালেও অতি সাংঘাতিক।

ওগো! বাংলার পিতা-মাতা, তোমরা আপন আপন কন্যাকে শিক্ষিতা কর, তা হলে এ। মহাপাপ নারী কর্তৃক অনুষ্ঠিত হবে না। তোমরা বিধবাকে ঘরে রেখ না- তাদের বিবাহিত করাও।

বেশ্যাকে বল, সে যেন তার মহাপাপের জীবন ছেড়ে দেয়!- সে জীবিকার জন্যে অন্য কোনো ব্যবসা করুক। দোকান দিক। এমন কুকার্য কি মানুষে করে? এমন ঘৃণিত কাজ কি নারীর দ্বারা অনুষ্ঠিত হবে? অভাবে, দুর্গতিতে, সমাজ তাড়িত হয়ে নারীকে যেন বেশ্যাবৃত্তি না করতে হয় তা হলে দেশের সকল লোককেই এ মহাপাপের অংশগ্রহণ করতে হবে।

হে দেশের সাহিত্যিকগণ, হে সমাজ-সংস্কারক, হে দেশ-সেবক, হে সম্পাদক তোমরা দেশে ব্যভিচারের বিরুদ্ধে তোমাদের আপন আপন শক্তি প্রয়োগ কর। এই কাজের জন্য একদল নারী মুক্তিসেনা প্রয়োজন। পতিত নারী বিষ এবং আগুনস্বরূপ- ওদের কাছে পুরুষ মানুষের যেতে নেই।

গেলেই কলঙ্কিত হবে, পা ফসকে যাবে। কাজ করবার ওদের বাঁচবার শক্তি থাকবে না। নিজেরাই পতিত হবে।

পাপের চিত্ত দেখতে হলে, বেশ্যাদের কাছে যেও- এ মহাপাপ ক্ষেত্র, এমন মহাশ্মশান আর নাই।

আল্লাহর আদেশ- পরের কুৎসা রটনা করো না

পরের নিন্দা করবার কী উৎকট ইচ্ছা সকলের! নিজের মধ্যে কত কদ, কত পাপ, সেদিকে একটি লোকও তাকায় না, শুধু পরের কথাই বলে।

যে যত ছোট সে তত পরের দোষ দেখে। নিজের দোষ-ত্রুটির কথা ভাবলে, সারা জীবন কেটে যায়। তুমি আবার অপরের ত্রুটি আলোচনা করছো? আল্লাহ্ যা নিষেধ করেছেন, কোন্ সাহসে তা কর? আবার নামাজ পড় শুধু নামাজই কি আল্লাহর আদেশ? আর যে আল্লাহর শত আদেশ উপেক্ষা করছ- সে দিকে লক্ষ্য নাই।

পরের দ্রব্যকে হারাম ভাব। তোমার উপর কেউ সম্পত্তি পরিচালনার ভার দিলেন। তুমি ধীরে ধীরে তার অজ্ঞাতসারে একে একে সব গ্রাস করতে থাকলে। তোমার নামাজ রোজার কামাই নাই। ধর্ম খুবই ঠিক রাখছ বটে। ভাবছো আল্লাহ কিছুই বুঝতে পারছেন না। তোমার লম্বা কুর্তা দিয়ে মানুষকে ঠকাচ্ছ- আল্লাহকে ঠকাতে পারবে না।

নামাজ পড়লে চোখে দেখা যায়, তাই আনুষ সুখী হয়। আবার যে সব পাপ গোপনে করা হয় তা তো দেখা যায় না, তাই মানুষ বিরক্ত হয় না। মানুষ যে দিনের মধ্যে উঠতে বসতে কত পাপ করে, আল্লাহকে কত রকমে অপমান করে, তার কত আদেশ অগ্রাহ্য করে- তা ধরে দেখতে গেলে, মনে হয়, মানুষ শয়তানের অনুচর, আল্লাহর দাস নয়।

দাসের কী এই কাজ? দাস কি কখনও প্রভুর আদেশ অমান্য করে আল্লাহকে এইভাবে তোমরা অপমান কর, তবু তিনি তোমাদের কত দয়া করেন। সারা জীবন ভরে তিনি তোমাদের অনুতাপের জন্য অপেক্ষা করেন। জীবন শেষ হয়ে যায়, তবু তোমরা সজাগ হও না।

আল্লাহর আদেশ পিতা-মাতাকে অমান্য করো না। অনেক মানুষকে দেখা যায়, জুম্মার নামাজ পড়তে চলেছে, অথচ ঘরে মা কলেরা রোগাক্রান্ত হয়ে কোন্ ফাঁকে মরে আছেন সে খবর রাখে না- মাকে যত্ন করা তো দূরের কথা। এই তো মানুষের নামাজ।

ছেলে সেয়ানা হয়েছে। বাপ-মা কী অবস্থায় থাকেন, কী খান সে সংবাদ কে রাখে? সেই বুড়াবুড়ি শেষকালে সংসারে দয়ার পাত্র-পাত্রী।

আল্লাহর আদেশ- পরের দ্রব্যে লোভ করো না। পরের দ্রব্যে তো লোভ লেগেই আছে- পরের সম্পত্তি আত্মসাৎ করবার দুর্নিবার ইচ্ছা সব হাজি, সব নামাজির আছে। কে কবে আপন বোনের সম্পত্তি তাকে দিয়ে থাকে? এসব আগুন খেয়ে নামাজ পড়লে, নামাজ হবে না।

মৃত ভ্রাতার নাবালক সন্তানগণকে বঞ্চিত করে, বিধবা পত্নীকে বঞ্চিত করে তাদের সম্পত্তি নিজে ভোগ কররার কী লোভ তোমার!

কেউ যদি কিছু গচ্ছিত রাখে, তাও ভোগ না করতে পারলে, মোটেই ভালো লাগে না।

পরের দ্রব্যকে হারাম ভাব। তোমার উপর কেউ সম্পত্তি পরিচালনার ভার দিলেন। তুমি ধীরে ধীরে তার অজ্ঞাতসারে একে একে সব গ্রাস করতে থাকলে। তোমার নামাজ রোজার কামাই নাই। ধর্ম খুবই ঠিক রাখছ বটে। ভাবছো আল্লাহ কিছুই বুঝতে পারছেন না। তোমার লম্বা কুর্তা দিয়ে মানুষকে ঠকাচ্ছ- আল্লাহকে ঠকাতে পারবে না।

আল্লাহর আদেশ-চুরি করো না

জনৈক পদস্থ রাজপুরুষ গোপনে রাত্রে ঘুষ আদায় করতেন- শুক্রবারে বাচ্চাহারা গাভীর মতো মসজিদ ঘরে দৌড়ে যেতেন। এ তো চমৎকার নামাজ! নামাজের ত্রুটি হয়।

কিন্তু ঘুষ গ্রহণ, প্রতারণা, মিথ্যা, প্রবঞ্চনা, এসব লেগেই আছে। বোধ হয় বণিকের খাতার মতো জমা-ওয়াসীল হয়ে পুণ্যের ভারই বেশি হবে। আর সেই পুণ্যবলে বেহেস্তে লেজ দোলাতে দোলাতে উপস্থিত হবে।

এই যে নামাজ- আমার মনে হয় এও অর্থ উপার্জনের একটি পন্থা। ধার্মিক বলে। সমাজে নাম থাকলে, অর্থ উপার্জনের কেননা বিঘ্ন হবে না। এই হচ্ছে ধারণা।

(চলবে…)

অনুদান ও দুঃখের উপশম চেষ্টা>>

…………………….
ধর্ম জীবন – লুৎফর রহমান।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

.……………………
আরও পড়ুন-
ঈমান ধর্ম-বিশ্বাস
ধর্মের ব্যাখ্যা
ধর্মের জীবিত উৎস
ঈশ্বরের রাজ্য বিস্তার
অনুদান ও দুঃখের উপশম চেষ্টা

……………………….
আরও পড়ুন-
মানব-চিত্তের তৃপ্তি
আল্লাহ্
শয়তান
দৈনন্দিন জীবন
সংস্কার মানুষের অন্তরে
জীবনের মহত্ত্ব
স্বভাব-গঠন
জীবন সাধনা
বিবেকের বাণী
মিথ্যাচার
পরিবার
প্রেম
সেবা
এবাদত

………………….
আরও পড়ুন-
মহৎ জীবন : পর্ব এক
মহৎ জীবন : পর্ব দুই
মহৎ জীবন : পর্ব তিন
কাজ : পর্ব এক
কাজ : পর্ব দুই
কাজ : পর্ব তিন
কাজ : পর্ব চার
ভদ্রতা : এক
ভদ্রতা : দুই

……………………
আরও পড়ুন-
মহামানুষ … মহামানুষ কোথায়
মহিমান্বিত জীবন
মহামানুষ
যুদ্ধ
স্বাধীন গ্রাম্যজীবন
আত্মীয়-বান্ধব
সত্য প্রচার
নিষ্পাপ জীবন
উপাসনা
নমস্কার
তপস্যা
তীর্থ-মঙ্গল
আত্মার স্বাধীনতার মূল্যবোধ
মনুষ্য পূজা
মন্দতাকে ঘৃণা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!