কাজ : পর্ব চার
-লুৎফর রহমান
কিছুদিন আগে চিৎপুর রোডের একটা দোকানে এক টুপি বিক্রেতাকে একটা ছোট ঘরে বসে একখানা ইংরেজি নভেল পড়তে দেখেছিলাম। আমার একটু আশ্চর্য বোধ হয়েছিল। যারা লেখাপড়া না শিখে আরামে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে তারা তো বই পড়বার ধার ধারে না।
তারা মনে করে এগুলি বাজে কাজ। কবে সেই দিন আসবে, যেদিন দেখতে পাব গাড়োয়ান ও কোচোয়ান বই খুলে পড়ছে, নাপিতের দোকানে রাজনীতি আলোচনা হচ্ছে।
জাতির হাজার হাজার মানুষের জীবনকে মৃত্যু হতে বাঁচাবার উপায় কী? দেশের লক্ষ মানুষ শরীরে বেঁচে থাকলেও তারা মরে আছে। যে জাতির এত মানুষ মরে আছে, সে জাতি অতি শীঘ্রই শেষ সমাধি লাভ করবে, এতো কবির কল্পনা নয়।
জেলখানায়, রাজদরবারে, রান্না ঘরে বা রাস্তার বিপরীতে, পাহাড়ের মাথায় অথবা সমুদ্রের উপর যেখানেই থাক না জ্ঞানরাজ্য হতে রত্ন মাণিক আহরণ করে তুমি তোমার জীবনকে সার্থক কর! তোমার কল্যাণের পথ তোমার হাতেই রয়েছে। কেন ভিক্ষুকের সঙ্কোচ নিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছ?
স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট না পেলে তোমার জীবনের মূল্য হবে না, কে তোমাকে একথা বলেছে? মানুষ তোমার সার্টিফিকেট দেখবে না, দেখবে তোমার জ্ঞান, তোমার মনুষ্যত্ব, তোমার নৈতিক বল, তোমার চরিত্র। মানুষ তোমার দুর্জয় শক্তির সামনে লুণ্ঠিত হবে- এ তুমি বিশ্বাস কর।
উকিল, ডেপুটির কাজ অপেক্ষা কাপড় বিক্রেতার মর্যাদা খুব কম, তা আমি মনে করতে পারি না। এক মহা উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আমরা অনন্ত মানুষ অনন্ত পথে অগ্রসর হচ্ছি, কাকে তুমি ঘৃণা করবে? মিস্ত্রীর নীরস বাটালির আঘাতে, রজকের কাপড়ের পাটের শব্দ, পণ্ডিতের সুললিত শ্লোকে- আমি শুনেছি একই গান।
তোমার উকিল মোক্তার বা স্কুলের মাস্টার হবার দরকার নাই, সুতরাং সার্টিফিকেট না হলেও তোমার চলবে। চাই তোমার মনুষ্যত্ব ও প্রাণশক্তি জাগরণ- পরিশ্রম করার ক্ষমতা। হযরত মোহাম্মদ (স), ঈচ্ছা (আ) , বুদ্ধ, শ্রীকৃষ্ণ এরা কি প্রবেশিকা অথবা বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সত্য প্রচারের শক্তি অর্জন করেছিলেন?
কলেজে যেতে পার নি, তুমি ইংরেজি জান না। তাই বলে তোমাকে মানুষ হতে কে নিষেধ করেছে? কাপড় বেচতে বেচতে কি তুমি বিজ্ঞানের আলোচনা করতে পার না? চাউলের বস্তার কাছে কি তুমি একখানা ভালো বই রেখে দিতে পার না? কেন গর্ধভের মতো সিঁথি তুলে জীবনকে ব্যর্থ করে দিচ্ছ?
কাপড় বেচতে অসম্মান হয় না, তুমি যে জ্ঞান-দরিদ্র, তুমি যে অবোধ, তোমার মনুষ্যত্ব নাই, তোমার চরিত্রবলের অভাব, তুমি নিষ্ঠুর ও কটুভাষী; এতেই তোমার অপমান, অন্য কারণে নয়। জ্ঞান আহরণ ব্যতীত মানুষের কী করে কল্যাণ হবে? মানুষ না হয়ে পশু হয়ে বাঁচতে আনন্দ কোথায়?
শুধু রাজনৈতিক শিক্ষায় মনকে আবেগ আকুল করে তুললে চলবে না। তোমার চরিত্রবান হওয়া চাই, তোমার মানুষ হওয়া চাই, কারণ তোমার মনুষ্যত্ব, চরিত্রবলের উপরই তোমার এবং তোমার জাতির বড় হওয়া নির্ভর করে।
সমাজসেবক হয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছ, কিন্তু তুমি সামান্য একটু স্বার্থ ত্যাগ করতে পার না- তুমি অনাথিনী বালিকার অশ্রুকে উপহাস কর, মূঢ় তুমি। ধর্মের অর্থ বিশেষ কোনো মতে বিশ্বাস নয়- ধর্মের অর্থ মনুষ্যত্ব, জীবনের পবিত্রতা, ন্যায়নিষ্ঠা, আত্মার বিনয় ও দৃষ্টি।
এক এক কাজে এক এক জনের বিশেষ মন থাকে। যে কাজ মন চায়, তাই করা উচিত- সেই কাজে শেষ পর্যন্ত লেগে থেকে জীবনকে সার্থক করতে হবে। জগতের প্রত্যেক কাজে, জীবনের প্রত্যেক সাধনার মহত্ত্ব ও মনুষ্যত্বের পরিচয় দেওয়া যায়।
উকিল, ডেপুটির কাজ অপেক্ষা কাপড় বিক্রেতার মর্যাদা খুব কম, তা আমি মনে করতে পারি না। এক মহা উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আমরা অনন্ত মানুষ অনন্ত পথে অগ্রসর হচ্ছি, কাকে তুমি ঘৃণা করবে? মিস্ত্রীর নীরস বাটালির আঘাতে, রজকের কাপড়ের পাটের শব্দ, পণ্ডিতের সুললিত শ্লোকে- আমি শুনেছি একই গান।
কাকে বলব, তুমি ছোট। কাপড় বিক্রেতা তার মোটা কাপড় দিয়ে দীন-দুঃখীর সেবা করতে পারে না? তার দীন উপহারে সতী বালিকার লজ্জা নিবারণ হয় না?
নিজের সুবিধার জন্যে সন্তানকে নিচ ও পাপ করতে প্ররোচনা দিও না। সেতো তোমার সন্তান নয়, সে এসেছে আল্লাহর কাছ থেকে, আল্লাহ্র কাজ করবার জন্যে। তুমি তার সাধনা পথের সহায় হও, তার বিবেক ও সুবুদ্ধির উপর হাত দেবার কোনো অধিকার তোমার নাই।
এগুলি ছাড়া এবাদত কাকে বলে, তা আমি বুঝি না। তুমি বড় সাহিত্যিক, তুমি বড় বৈজ্ঞানিক, দিকে দিকে তোমার যশ ও গৌরব ছড়িয়ে পড়েছে, তুমি শ্রেষ্ঠ কবি, প্রকৃতি মুখর হয়ে তোমাকে কেবল গান জোগাচ্ছে, মানুষ তোমাকে দেখে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, ওসব দেখে আমার মনে তৃপ্তি আসে না।
দীন নয়নে একটা কটাক্ষ তোমার প্রাণকে চমকিত করে তোলে কিনা? শিশুর হাসি তোমার প্রাণে আনন্দ আনে কিনা? দুঃখীর নয়নজল তোমার কর্মনিরত হাতখানি একটু কাপিয়ে তোলে কি না? তোমার গ্রামে সেই একটা দুঃখী নারীর সিক্ত চোখের স্মৃতি তোমার বুকে লেগে রয়েছে কি না?
অভাগার করুণ চিৎকার তোমার কানে আশে কিনা? যদি বল আমার সময় নাই, আমি কত বড় ব্যস্ত, আমি দেশসেবা করতে যাচ্ছি, আমার চিন্তার মধ্যে কেউ বাধা দিও না, আমি বলব তোমার বিজ্ঞানের হাড়গোড়গুলি সমুদ্রজলে ফেলে দাও- তোমার কবিতার বইগুলি পুড়িয়ে ফেলো- তোমার দেশসেবার দরকার নাই, আমার জন্যে তুমি লড়াই করতে যেয়ো না।
দেশসেবার নামে যেদিন সুলতান প্রথম বায়েজীদ তার নিরপরাধ ভাইকে নিষ্ঠুরের মতো হত্যা করলেন, সেদিন আল্লাহ্ নীরব ভাষায় বলেছিলেন, এর নাম দেশসেবা নয়। অবিচার করে রাজকর্ম পালন করার দরকার নাই। নিষ্ঠুর প্রাণ হয়ে কবিতা লেখবারও কোনো প্রয়োজন নাই।
ছোট লোকের ছেলে ছোট হয়, লোকে এ কথা বলে থাকে। মানুষ যাদের মধ্যে বাস করে, তাদের চিন্তা, প্রবৃত্তি ও আশা-আকাঙ্ক্ষা মনের উপর বড়ই ক্রিয়া করে সত্য! পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদের আত্মাকে চেপে মেরে ফেলে। কিন্তু মানুষ কখনো এ জগতে ছোট হয়ে আসে না।
যদি সুবিধা ও সুযোগ থাকে, তা হলে হীন মানুষের ছেলেও কালে বরেণ্য হতে পারে। মানুষই মানুষকে ছোট ও নিচু করে ফেলে। যে শিশু পিতা-মাতা, বন্ধু বান্ধব, দেশ ও সমাজের মানুষের কাছে জীবনে বড় কথা শোনে না, সে কেন বড় হতে চাইবে? কু-কাজ করে হীনতার পরিচয় নিয়ে আমরা চারদিককার সবাইকে যদি গৌরব করতে শুনি, তা হলে আমার দুর্বল মন ধীরে ধীরে নিচ হতে থাকবে না কেন?
সাহিত্যের কাজ মানুষকে তার চারদিককার মন্দ-শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তোলা, তার মধ্যে সমাজ, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাহ্য করে ন্যায়, সত্য ও আল্লাহূকে মেনে নেবার প্রবৃত্তি সৃষ্টি করে দেওয়া।
নিজের সুবিধার জন্যে সন্তানকে নিচ ও পাপ করতে প্ররোচনা দিও না। সেতো তোমার সন্তান নয়, সে এসেছে আল্লাহর কাছ থেকে, আল্লাহ্র কাজ করবার জন্যে। তুমি তার সাধনা পথের সহায় হও, তার বিবেক ও সুবুদ্ধির উপর হাত দেবার কোনো অধিকার তোমার নাই।
ক্রমওয়েল প্রথম জীবনে একটা মেঠো চাষা ছিলেন অথচ শেষ জীবনে তার শক্তিতে বিলেতের শাসনতন্ত্র একেবারে ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল। ক্রমওয়েলের জীবন-সাধনা ইংরেজ জাতির ইতিহাসের পৃষ্ঠাকে উজ্জ্বল করে রেখেছে।
তোমার যদি বড় অভাব হয়ে থাকে- মানুষের দুয়ারে হাত পেত না। শারীরিক পরিশ্রম কর, ছোট ব্যবসা করে যদি সে অভাবের মীমাংসা হয়- লজ্জা করো না, সেই ছোট কাজ করেই তোমার অভাবের মীমাংস কর। তোমার পত্নী, তোমার মা, তোমার ছেলে মেয়েগুলিকে তুমি সুখ দাও। তোমার এ দীন জীবন দেখে আমি তোমায় ঘৃণা করব না।
নেপোলিয়নের প্রিয় ঐতিহাসিক জেনারেল জেমিনী প্রথম জীবনে কোম্পানির কাগজের দালাল ছিলেন। কাপ্তান কুক সুচ সুতা বেচতেন।
দার্শনিক ব্রাউন ছিলেন তাঁতী! প্রাণিতত্ত্ববিদ আলদ্রভিনদা প্রথম জীবনে জনৈক ভদ্রলোকের বালক ভৃত্য ছিলেন। জ্যোতির্বিদ পিকার্ড যখন বাগানের মালী ছিলেন, তখনই তিনি সাধনার পথ ঠিক করে নিয়েছিলেন। এঁরা প্রথম জীবনে খুব ছোট কাজ করতেন।
এই ধরনের ছোট কাজ আমাদের দেশে যদি কেউ করে, লোকে তাকে ছোটলোক বলবে। ছোট লোকদিগকেই মানুষ হতে হবে। জাতির প্রাণ এরা। জাতিকে এরাই ধ্বংস করে, এরাই বাঁচিয়ে তোলে। যে ছোট হয়ে আছ, সে নিজের দুর্ভাগ্যের জন্য দুঃখ করো না। তোমার মস্তিষ্ক ও শরীর নিয়ে তুমি তোমার বড় হবার পথ মুক্ত করে নিতে পার।
তুমি সামান্য কাজ করছ? তোমার জীবনকে জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের গৌরব দিয়ে বড় করে তুলতে চাও? তা হলে বন্ধু-বান্ধব ও মানুষের উপহাসকে উপহাস করে জ্ঞানের আলোচনা করো। বিদেশী ভাষা পড়বার দরকার নাই- বিদেশী ভাষা জানলে মানুষের সম্মান বাড়ে এ কথা ভাববার দরকার নাই।
তুমি তোমার নিজের ভাষার ভিতর দিয়েই চরিত্রবলে, সৎসাহসে ও বুদ্ধিতে বড় হতে পার! দেশের মানুষের কাছে তোমার সম্মান হবে। মানুষ তোমার স্পর্শে এসে সুখী হবে। তুমি খেলা করে, শুধু মানুষকে সেলাম জানিয়ে, বড় মানুষকে মিথ্যা তোষামোদ করে কেন তোমার জীবনকে বিফল করে দিচ্ছ?
বিলেতে এবং অন্যান্য দেশে বহু মানুষ জীবনের প্রথম অবস্থায় খুব ছোট ছিলেন। উত্তরকালে পরিশ্রম ও জ্ঞান সাধনা দ্বারা তারা দেশের মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র হয়েছিলেন।
শুধু নভেল পাঠ করলে তোমার শিক্ষা পূর্ণ হবে না, নভেল, উপন্যাস, কাব্য-কবিতা তোমার মনে শক্তি, সাহস, সুবুদ্ধি ও উদ্যম আনতে পারে, কিন্তু মানবজীবন শুধু শক্তি, সাহস, উদ্যম আর সহানুভূতিতে বেঁচে থাকবে না। শক্তি আছে, কিন্তু সে শক্তি প্রয়োগ করবার পন্থা তুমি জান না;
তোমার সাহস আছে, তোমার উদ্যম আছে, তোমার প্রাণে প্রেমও আছে- কিন্তু অস্ত্রহীন হয়ে সাহসী হয়ে লাভ কী? অন্ধ হয়ে উদ্যমশালী হয়ে কী ফল? হীন হয়ে প্রাণে প্রেম পোষণ করলে মানব-দুঃখের অবসান হবে না।
মনুষ্যত্ব, সৎসাহস ও চরিত্রবল অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে তোমার দেশের আইন, বর্তমান জগতের অবস্থা জমাজমি সংক্রান্ত মোটামুটি জ্ঞান, হিসাবপত্রের জ্ঞান- এসব শিখতে হবে, নইলে তোমার মনুষ্যত্ব ও জ্ঞান অনেক সময় ব্যর্থ হয়ে যাবে। তোমার চেয়ে ছোট যারা, তাদের কাছে তোমাকে বোকা ও অপ্রস্তুত হতে হবে।
জীবনে ধনী লোক হতে পার আর না পার, জগতে বড় হতে চেষ্টা কর।
তোমার যদি বড় অভাব হয়ে থাকে- মানুষের দুয়ারে হাত পেত না। শারীরিক পরিশ্রম কর, ছোট ব্যবসা করে যদি সে অভাবের মীমাংসা হয়- লজ্জা করো না, সেই ছোট কাজ করেই তোমার অভাবের মীমাংস কর। তোমার পত্নী, তোমার মা, তোমার ছেলে মেয়েগুলিকে তুমি সুখ দাও। তোমার এ দীন জীবন দেখে আমি তোমায় ঘৃণা করব না।
তোমার হাতে মানবসমাজের বহু কল্যাণ হতে পারে, তোমার বিরাট আত্মা, তোমার পূত, শুভ্র, চরিত্র নিয়ে তুমি আজ ঊষার আলোর পথের দিকে তাকাও। সমস্ত গগন পবন আজ তোমায় ডেকেছে। এই জড় দেহের হীন ক্ষুধাগুলি আজ চূর্ণ করে ফেল। তোমার আত্মার কিরণ দুঃখ-দগ্ধ আর্ত-পাপ নর-নারীর কাছে শুভ ও কল্যাণ বয়ে নিয়ে যাক। আজ সকল পাপ-তাপ তোমা হতে খসে পড়ুক।
এই ছোট কাজ করার সময় সঙ্গে সঙ্গে তোমাকে পণ্ডিত ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্বন্ধ রাখতে হবে। তাদের বই তোমার পড়তে হবে। তোমাকে তোমার পত্নীকে, তোমার মা, তোমার বোন, তোমার কন্যা, তোমার প্রতিবেশী সকলকে ভালো কথা শুনাতে হবে।
যে উপন্যাস চিত্তকে মার্জিত ও রুচিসম্পন্ন করে, সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিতে সমর্থ, চিত্তকে বিনয়ী, কোমল ও মধুর করে তোলে, যা আত্মার পশু-ভাব চূর্ণ করে প্রেমের মর্যাদা শিক্ষা দেয়- যা নারীর সুষমা সৌন্দর্যকে শ্রদ্ধা করতে শেখায়- সে উপন্যাস পড়তে পারো। নানা দেশের ইতিহাস বিজ্ঞানের বই, জগতের মহামানুষ ও পণ্ডিতদের জীবনী এসব তোমাকে পড়তে হবে।
মানুষের শ্রদ্ধার জন্যে লালায়িত হয়ো না, তুমি শুধু তোমার কাজ করে যাবে। সাধনা পথে শ্রদ্ধার সম্মানের জন্য লালায়িত হলে তোমার সাধনা পণ্ড হয়ে যাবে।
মনের চাঞ্চল্য ও ধৈর্যশূন্যতা মানুষের সমূহ অনিষ্টের মূল। বছরের পর বছর চলে যাক- পল্লীর শান্ত-শীতল গৃহের বারান্দায় বসে তুমি তোমার পবিত্র নিরীহ জীবন, তোমার কর্ম, তোমার জ্ঞানানুশীলনের সাধনা দিয়ে কাটিয়ে দাও। কি ব্যবসাক্ষেত্রে, কি শারীরিক পরিশ্রমে, কি পাঠকার্যে- কখনও ধৈর্য হারিও না। যেতে দাও বছরের পর বছর- তোমার জন্যে গৌরব অপেক্ষা করছে।
তোমার ছোট সুন্দর পরিবারকে নিয়ে দরিদ্র স্বচ্ছল অবস্থায় জ্ঞানরাজ্যের সঙ্গে যোগ রেখে যদি তুমি মরে যেতে পার- তোমার জীবন সার্থক হবে।
যেখানে আছ, সেখান হতেই তোমার যাত্রা শুরু হোক- এখান হতেই তুমি তোমার জীবনকে বড় করে তুলতে পার।- কোথাও যাবার দরকার নাই।
যে সমস্ত মানুষ বিদেশী মানুষের কাছে পণ্ডিত বলে উপাধি পেয়েছে তাদের যদি চরিত্রবল না থাকে, তাদের মন যদি সঙ্কীর্ণ ও নিষ্ঠুর হয়, তাদের কাছে যেয়ো না তাদেরকে সম্মান প্রদর্শন করো না।
যার চরিত্রবল নাই, মানুষকে যে ভালবাসতে জানে না, অভাব যার মোটে ঘোচে না, মানুষের কাছে হীন হয়ে সম্মান ভিক্ষা করে, সে অপদার্থ শিক্ষিত হলেও সে শিক্ষিত নয়। তোমাকে জাগতে হবে। পুনঃপুনঃ বলছিইচ্ছা হলে তুমি বড় হতে পার। তুমি জাতির সেবা করতে পার।
তোমার হাতে মানবসমাজের বহু কল্যাণ হতে পারে, তোমার বিরাট আত্মা, তোমার পূত, শুভ্র, চরিত্র নিয়ে তুমি আজ ঊষার আলোর পথের দিকে তাকাও। সমস্ত গগন পবন আজ তোমায় ডেকেছে। এই জড় দেহের হীন ক্ষুধাগুলি আজ চূর্ণ করে ফেল। তোমার আত্মার কিরণ দুঃখ-দগ্ধ আর্ত-পাপ নর-নারীর কাছে শুভ ও কল্যাণ বয়ে নিয়ে যাক। আজ সকল পাপ-তাপ তোমা হতে খসে পড়ুক।
বাপ-মায়ের অন্ধ স্নেহ, আত্মীয়-বান্ধবদের চিন্তাশূন্য মন্তব্য তোমার আত্মাকে যেন দুর্বল না করে ফেলে। মানুষের মনুষ্যত্বকে নষ্ট করে দেবার জন্যে এই দুটির মতো পরম শত্রু আর নাই।
তুমি নিজেকে কখনও নিঃসহায় ও দরিদ্র মনে করো না। যেদিন তুমি জন্মেছিলে সেদিন আল্লাহ্ তোমাকে দু’খানি হাত, দুখানি পা আর একখানা মাথা দিয়েছিলেন- মানব জীবনের পক্ষে এই-ই যথেষ্ট সম্বল।
(সমাপ্ত)
<<কাজ : পর্ব তিন ।। ভদ্রতা : এক>>
………………..
মহৎ জীবন -লুৎফর রহমান।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
………………….
আরও পড়ুন-
মহৎ জীবন : পর্ব এক
মহৎ জীবন : পর্ব দুই
মহৎ জীবন : পর্ব তিন
কাজ : পর্ব এক
কাজ : পর্ব দুই
কাজ : পর্ব তিন
কাজ : পর্ব চার
ভদ্রতা : এক
ভদ্রতা : দুই
……………………
আরও পড়ুন-
মহামানুষ … মহামানুষ কোথায়
মহিমান্বিত জীবন
মহামানুষ
যুদ্ধ
স্বাধীন গ্রাম্যজীবন
আত্মীয়-বান্ধব
সত্য প্রচার
নিষ্পাপ জীবন
উপাসনা
নমস্কার
তপস্যা
তীর্থ-মঙ্গল
আত্মার স্বাধীনতার মূল্যবোধ
মনুষ্য পূজা
মন্দতাকে ঘৃণা
……………………….
আরও পড়ুন-
মানব-চিত্তের তৃপ্তি
আল্লাহ্
শয়তান
দৈনন্দিন জীবন
সংস্কার মানুষের অন্তরে
জীবনের মহত্ত্ব
স্বভাব-গঠন
জীবন সাধনা
বিবেকের বাণী
মিথ্যাচার
পরিবার
প্রেম
সেবা
এবাদত