শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : সাত
শত্রু তোমার অন্তরে
শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,-
শত্রু তোমার বাহিরে নয়, শত্রু তোমার অন্তরে। অন্তরের শত্রুকে খুঁজে বের কর এবং জ্ঞানের শলাকা দিয়ে বিদ্ধ ক’রে তাকে ধ্বংস কর। বাইরে কাকে শত্রু ব’লে মনে কচ্ছ? জগতে সবাই তোমার আপন ভাই, একজনও তোমার পর নয়, একজনও তোমার অনাত্মীয় নয়।
অন্তরের ভিতরে কাম, ক্রোধ, লোভ প্রভৃতি শত শত্রুকে দুধ-কলা দিয়ে সাপ পোষার মত পোষণ কচ্ছ, তাই জগতের সকল আত্মীয় অনাত্মীয় হয়ে যাচ্ছে, জগতের সকল আপন জন পর হয়ে যাচ্ছে, সকল মিত্র শত্রু হচ্ছে।
শান্তির বারতা দ্বিতীয় খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ৫৯ – ৬০)
নামেই একান্ত আশ্রয় লয়
শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,-
নামের চরণে একান্ত ভাবে শরণাগত হও। নিজের জীবনের সকল নির্ভর একমাত্র নামের উপরে দাও। অফুরন্ত বিশ্বাস নামেতে অর্পণ কর। সুখে,দুঃখে, সম্পদে, বিপদে, উণ্থানে, পতনে, সর্ব্বদা, সর্ব্বাবস্থায় নামই যে তোমার একমাত্র আশ্রয়, একথা একটী নিমেষের জন্যও বিস্মৃত হবে না।
নামকেই জীবনের পরম শরণ, পরম সঞ্চয়, পরম পাথেয় ব’লে গ্রহণ কর। সমগ্র মনপ্রাণ দিয়ে নামকে জীবন-প্রভু ব’লে মেনে লও। নামের ভিতরেই নামী লুকিয়ে আছেন। নামের ভিতর দিয়েই সেই নামীকে জীবনের পরমপ্রভু ব’লে উপলব্ধি কর।
শান্তির বারতা দ্বিতীয় খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ৬৩)
প্রেমকে এককেন্দ্রক কর
কুমিল্লা জেলান্তর্গত শিবপুর-নিবাসী অপর এক পত্রলেখকের পত্রের উত্তরে শ্রীশ্রীবাবামণি লিখিলেন,-
যেখানে যাই, মানুষের ভিতরে অপূর্ব্ব প্রেমভাব দর্শন করি। এই প্রেমভাব ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িতেছে। কিন্তু ইহাকে এককেন্দ্রক করিতে পারিলে এক মহাশক্তির উদ্ভব হইবে, দিব্য জ্যোতির মত স্নিগ্ধ অথচ ভাস্কর তেজে ঐশ্বরিক মহিমা বিশ্ব ব্যাপিয়া এক মহাজাগরণের সম্পাদন করিবে।
চতুর্দ্দিকে অপচীয়মান প্রেমকে নিষ্ঠার রজ্জুতে বাঁধিয়া যদি একটী স্থানে আনিয়া কেন্দ্রীভূত করিতে পার, জীবনের সকল অসার্থকতা একটী নিমেষে দূর হইয়া যাইবে। সেই চেষ্টা কর। সেই চেষ্টাই জীবনের শ্রেষ্ঠ সার্থকতার কারণ হইবে।
সকল ভালবাসার পরমকেন্দ্র শ্রীভগবান্,-মাত্র এই কথাটুকু ভুলিয়া যাইয়া জীব অবিরাম নিত্য নূতন দুঃখের ফসল চয়ন করিতেছে, জীবন ভরিয়া কেবলই হতাশা, মনস্তাপ আর দুর্ভাগ্য কুড়াইতেছে। ভুলের ফসল না তুলিয়া আজ প্রেমের ফসল তোল।
অখণ্ড-সংহিতা ষোড়শ খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ৮৯)
আচরণীয় কি
প্রশ্ন,- আমাদের আচরণীয় কি?
সত্যবাক্, হিতবাক্ এবং মিতবাক্। হিতাহার, মিতাহার এবং মেধ্যাহার। সত্যশীলের, সাধনশীলের ও ভজনশীলের সঙ্গ। আত্মনিন্দা, পরনিন্দা ; ও গুরুনিন্দা ত্যাগ। দেহ-পতনের পরে কি হবে, সেই দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ এবং সংসারের অনিত্যতা স্মরণের সাথে অহর্নিশ নিত্য শাশ্বত সনাতন পরমপ্রভুর ঐকান্তিকী সেবা।
অখণ্ড-সংহিতা ত্রয়োদশ খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ১৯১)
নামে বিশ্বাস
শ্রীশ্রীবাবামণি নিজ বাল্য-জীবনের কথা বলিতে লাগিলেন।
শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,-
তোরা হয়ত বল্ বি Chance (দৈবাৎ ঘটনা), কিন্তু আমি তা মনে করি নাই। এমন সব ঘটনা আমার বাল্যকালে ঘটেছে, যা থেকে আমার বিশ্বাস হয়েছে যে, ভগবানের নামের শক্তি অপরিসীম। আমার হাতে চাপা লেগে একবার একটা পীঁপড়ে ম’রে গেল, মনে বড় দুঃখ হ’ল।
প্রাণপণে ভগবানের নামজপ কত্তে লাগলুম, কিছুক্ষণ পরে দেখ্ লাম, পীঁপড়েটার প্রাণ এসেছে, সে আস্তে আস্তে নিজের গন্তব্য স্থানে গমন কচ্ছে। দেখে ভগবানের নামে যা বিশ্বাস এল, বল্ বার নয়। তোরা হয়ত বল্ বি, পীঁপড়েটা আদবে মরে নি, অজ্ঞান হয়েছিল এবং সময় যেতে ক্রমশঃ জ্ঞান তার ফিরে এসেছিল।
কিন্তু আমি তা মনে করিনি, বিশ্বাসও করি নি। নামের শক্তি যে অপরিসীম, সেই বিশ্বাসই আমার হয়েছিল এবং সেই বিশ্বাসই আমার রয়েছে। বাবার কথা শুনে ফুটবল খেলা দিলাম ছেড়ে কিন্তু খেলা দেখ্ বার বাতিক ছাড়্ তে পার্ লাম না।
ভিন্ন ভিন্ন দলে খেলা হ’ত, যে দল হার্ তে থাক্ ত, সেই দলের প্রতি আমার গভীর সহানুভূতি হ’ত, আমি মনে মনে তাদের পক্ষাবলম্বন কত্তাম। শুধু পক্ষাবলম্বন নয়, তাদের জয় কামনা ক’রে নামজপ শুরু কত্তাম। দেখেছি, পরিণামে তারাই জয়ী হ’ল।
এভাবে অসংখ্যক্ষেত্রে যখন দেখ্ তে লাগ্ লাম যে, নাম-জপ কর্ল্লে জয় হয়, তখন থেকে একদিনের জন্যও আমি নামের শক্তিতে অবিশ্বাস কত্তে পারি নি। তোরা বিশ্বাস কর্, নামের শক্তি অপরিসীম। বিশ্বাস কর্, নাম অপরাজেয়।
অখণ্ড-সংহিতা ষষ্ঠ খণ্ড
সাধকের সেবা ও সিদ্ধের সেবা
অপর একজনের প্রশ্নের উত্তরে শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,-ভগবৎ-সেবা দ্বিবিধ। সাধকরূপে সেবা আর সিদ্ধরূপে সেবা। সাধকের সেবায় লালসাময়ী প্রার্থনা থাকে, সিদ্ধের সেবায় ভগবৎ-প্রীতি ব্যতীত অন্য কোনও অভিলাষের ছন্দাংশমাত্রও থাকে না।
সাধকের ভগবৎ-সেবা আত্মমুখী, অর্থাৎ নিজের কুশল, নিজের উন্নতি, নিজের মুক্তি এই সবের দিকে তাকিয়ে জীব তাঁর সাধক অবস্থায় ভগবৎ-
সেবা, ভগবৎ-পূজা, ভগবৎ-স্মরণ, ভগবন্মনন, ভগবদারাধন প্রভৃতি করেন। কিন্তু সিদ্ধের সেবা ইষ্টমুখী অর্থাৎ নিজের কুশল, নিজের তৃপ্তি, নিজের উন্নতি, নিজের উদ্ধার এসব তাঁর ভগবৎ-সেবার প্রণোদক নয়, একমাত্র ভগবৎ-প্রীতি-সম্পাদনই তাঁর যাবতীয় সাধন, ভজন, স্মরণ, মনন, সেবন ও আরাধনের লক্ষ্য। সাধক ভগবানের সেবা করেন অভাবে, সিদ্ধ করেন স্বভাবে।
অখণ্ড-সংহিতা ত্রয়োদশ খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ১৮৫ – ১৮৬)
নামামৃত
(১)
নামের অমৃত পান কর বন্ধুগণ,
নাম-রসে ঘটিবে যে নব সঞ্জীবন।
নাম নিত্য, নাম সত্য, নাম মহাশ্রয়,
নামের সেবায় ঘটে অরুণ উদয়।
অজ্ঞান অসার রুচি দূরে চ’লে যায়,
নিরন্তর নামে রত থাকার দয়ায়।
সবারে ডাকিয়া কাছে আন আপনার,
প্রেমময় হোক্ এই অখিল সংসার।
(২)
ঈশ্বরে সঁপিয়া মন যাত্রা কর শুরু,
ভয়ে কেন বক্ষ তোর কাঁপে দুরুদুরু?
নামাশ্রয় করি’ কর সর্ব্বভয় জয়,
দেহ মন কর দ্রুত নামামৃত-ময়।
শত প্রলোভন-জাল ছিঁড়িয়া সবলে
পরমপ্রভুর কাছে চল দলে দলে।।
ভালবাস বিশ্ববাসী সবারে সমান,
প্রতি জীবে দেখ তব আরাধ্য মহান্।।
না করিয়া কাহারেও ঘৃণা অবহেলা,
ভাসাও নির্ভয়ে তব জীবনের ভেলা।।
তোমার নিস্তারে হোক বিশ্বের নিস্তার,
তোমার উদ্ধার-মাঝে জগত উদ্ধার।
অখণ্ড-সংহিতা ত্রয়োবিংশ খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ২৮১ – ২৮২)
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : আট>>
……………..
আরও পড়ুন-
স্বামী স্বরূপানন্দের বাণী
স্বামী স্বরূপানন্দ : গুরু-শিষ্য
স্বামী স্বরূপানন্দ : সরল ব্রহ্মচর্য্য
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ : চিঠিপত্র
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ : উপাসনা
স্বামী স্বরূপানন্দ : কবিতা/গান
স্বামী স্বরূপানন্দ : উপদেশ
স্বামী স্বরূপানন্দ : উপদেশ দুই
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : এক
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : দুই
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : তিন
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : চার
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : পাঁচ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : ছয়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : সাত
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : আট
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : নয়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : দশ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : এগারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : বারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : তেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : চোদ্দ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : পনেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : ষোল
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : সতেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : আঠারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : উনিশ
…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………….
আরও পড়ুন-
মহানবীর বাণী: এক
মহানবীর বাণী: দুই
মহানবীর বাণী: তিন
মহানবীর বাণী: চার
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: এক
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: এক
গৌতম বুদ্ধের বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: তিন
গৌতম বুদ্ধের বাণী: চার
গুরু নানকের বাণী: এক
গুরু নানকের বাণী: দুই
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী
কনফুসিয়াসের বাণী: এক
কনফুসিয়াসের বাণী: দুই
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: এক
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: দুই
শ্রী শ্রী কৈবল্যধাম সম্পর্কে
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ১ম খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ২য় খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ৩য় খন্ড
স্বামী পরমানন্দের বাণী: এক
স্বামী পরমানন্দের বাণী: দুই
স্বামী পরমানন্দের বাণী: তিন
স্বামী পরমানন্দের বাণী: চার
স্বামী পরমানন্দের বাণী: পাঁচ
স্বামী পরমানন্দের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: এক
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: চার
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: পাঁচ
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: সাত
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: আট
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: নয়