শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : বারো
নিজের কাছে নিজেই আমি
ভক্ত শ্রীশ্রীবাবামণির পায়ে লুটাইয়া পড়িলেন। শ্রীশ্রী বাবামণি পুনরায় আবৃত্তি করিতে লাগিলেন,-
নিজের কাছে নিজেই আমি
দিলাম ধরা প্রাণের দায়ে,
শীতল হ’ল পরাণ আমার
শরণ পেয়ে নিজের পায়ে।
আপন চরণ আপনি পূজি,
আপন হৃদয় আপনি খুঁজি,
এক জনারে দুই সাজিয়ে
প্রেমের খেলা মলয়-বায়ে,
প্রেম-বিরহের চল্ ছে লীলা
নিজের সৃষ্ট অন্তরায়ে।।
খেয়া নৌকার এ আম্ দানী
কেবল বাইরে জানাজানি,
এ-পার ও-পার উঠ্ ল ফুটে
চপল নদীর স্রোত বহায়ে ;
একই ছিলাম, দুই হ’য়ে তুই
উঠ্ লি আমার নামের নায়ে।।
অখণ্ড-সংহিতা চতুর্দ্দশ খণ্ড
সঙ্গীতের প্রকৃত উদ্দেশ্য
সন্ধ্যা সাড়ে ছয় ঘটিকায় শ্রীশ্রীবিশ্বম্ভরের আখড়ায় একটী সঙ্গীত-সম্মেলনের আহ্বান হইয়াছে। শ্রীশ্রীবাবামণিকে পূর্ণ দুই ঘন্টা ব্যাপিয়া বক্তৃতা দিতে হইল।
সঙ্গীতের বিকাশ, ক্রম, স্তর-বিভাগ, সঙ্গীতের বৈজ্ঞানিকতা, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশেষত্ব, কীর্ত্তন-সঙ্গীত এবং তাহার মাধুর্য্য প্রভৃতি বহু বিষয়ে অগাধ জ্ঞানপূর্ণ আলোচনার পরে উপসংহারে শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,-সাধকের নিকটে সঙ্গীত শুধু গানই নয়, সঙ্গীত তার ভগবল্লাভের এক পরম সঙ্গতি।
সঙ্গীতের ভিতরে আত্মবিলয় আর ভগবানের ভিতরে সঙ্গীতের বিলয়, এই হ’ল সঙ্গীতের চরম উৎকর্ষের পরিচয় এবং চরম সার্থকতার প্রমাণ। গান সকলেই গায়, কিন্তু যাঁকে শুনালে গান সার্থক, তাঁকে শুনায় কয় জনে? বাইরের তামসিক লোকদের করতালি সংগ্ৰহ গায়কের কখনো লক্ষ্য হ’তে পারে না, অন্তরের অকপট বিকাশ এবং জীবনেশ্বরের চরণে সেই বিকাশের পরিপূর্ণ উপঢৌকন, এই হবে সঙ্গীতের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
সঙ্গীতের দেশব্যাপী প্রসার একান্ত আবশ্যক। কিন্তু আমাদের বদ্ধপরিকর হ’তে হবে যেন এই সঙ্গীতের সুর-লহরী প্রত্যেক মানবের সুপ্ত চেতনাকে জাগিয়ে তোলে, নীচ, হীন, ঘৃণ্য স্বার্থের দাসকে ভূমা-স্বরূপের দিকে অগ্রসর ক’রে দেয়।
অখণ্ড-সংহিতা পঞ্চদশ খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ২৩০ -২৩১)
নাম অব্যর্থ
ময়মনসিংহ জেলান্তর্গত নান্দাইল-নিবাসী জনৈক পত্র-লেখকের পত্রের উত্তরে শ্রীশ্রীবাবামণি লিখিলেন,-
ভগবন্নাম কখনও ব্যর্থ হয় না। অনন্ত কাল হইতেছে তোমার অনবধি কৃষিক্ষেত্র, এই ক্ষেত্রে একটী একটী করিয়া নামের বীজ অবিরাম বুনিয়া যাও। একটী নামও বৃথা যাইবে না।
প্রত্যেকটীই কোনও না কোনও কালে, কোনও না কোনও যুগে জ্ঞান প্রেম-কর্ম্মের সমন্বয়ের ভিতর দিয়া তোমার মঙ্গলার্থে, জগতের মঙ্গলার্থে, তোমার পরমারাধিত শ্রীপ্রভুর প্রীত্যর্থে অঙ্কুরিত হইবে, শাখান্বিত হইবে, পল্লবিত হইবে, পুষ্পিত হইবে।
অখণ্ড-সংহিতা ত্রয়োদশ খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ১৫৫)
ভোগ-ত্যাগের ঊর্দ্ধে যাও
অপর একজনের প্রশ্নের উত্তরে শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,-
তোমাদের যত ভোগ আর ত্যাগ সবই জড়কে নিয়ে। তাই এ ভোগেরও প্রতিক্রিয়া আছে, এ ত্যাগেরও প্রতিক্রিয়া আছে। যার প্রতিক্রিয়া আছে, কোনো না কোনো প্রকারে সে-ই তোমাকে ব্যাথ্যা দেবে। ভোগের বাসনাও ত্যাগ কর, ত্যাগের বাসনাও ত্যাগ কর, ভোগ-
ত্যাগের ঊর্দ্ধে যাও। কিন্তু তার একমাত্র পন্থা হচ্ছে নিজেকে জগতে অনাথ, নিরাশ্রয়, একক, নিঃসঙ্গ এবং সর্ব্বজনপরিত্যক্ত জেনে অনন্যশরণ হ’য়ে শ্রীভগবচ্চরণাশ্রয়।
অখণ্ড-সংহিতা ত্রয়োদশ খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ১৮৬)
নির্ভর করহ নামে
ত্রিপুরান্তর্গত কোনও এক ভক্তকে শ্রীশ্রীবাবামণি লিখিলেন,-
নির্ভর করহ নামে
সব ভয় দূরে যাবে,
উদ্যম, উৎসাহ, শক্তি,
শান্তি, সহিষ্ণুতা পাবে।
বাহুর পশ্চাতে রাখ
বীর্য্যময় মহানাম,
বিশ্বের কল্যাণে তব
পূর্ণ হবে মনস্কাম।
পরিহরি’ দুর্ব্বলের
উচ্চরোলে হাহাকার
হও অনুক্ষণ তাঁর,
লক্ষ্য ত্রিভুবন যাঁর।
সম্মুখে পশ্চাতে আর
দক্ষিণে ও বাম-ভিতে,
জাগাও নামের ধ্বনি
দেহে, মনে, প্রাণে,চিতে।
নির্ভর করহ নামে,
নিত্য, সত্য, সারাৎসার,
নির্ব্বাসিত হবে দুঃখ,
ক্লেশ, দ্বন্দ্ব, অন্ধকার।
অখণ্ড-সংহিতা সপ্তম খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ২৩১ – ২৩২)
আত্মসমর্পণই সুখের মূল
শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,-
সুখ যদি পেতে চাও, যে সুখের লয় নেই, ক্ষয় নেই, অথচ বৃদ্ধি আছে, সেই পরম সুখ যদি পেতে চাও, নির্ব্বিচারে আত্মসমর্পণ কর। ভগবানে আত্মনিবেদনিই পরম সুখের সেতু, ভগবানের হাতে নিজেকে ছেড়ে দেওয়া পরমশান্তির মূল। সুখ যদি চাও, শান্তি যদি চাও, বিচার-বিতর্ক পরিত্যাগ কর, অবিরাম অনুক্ষণ নিজেকে তাঁর ইচ্ছার অনুগমনের জন্য তৈরী কর।
শ্রীশ্রী বাবামণি বলিলেন,-
কিন্তু আত্ম-সমর্পণের ইচ্ছা কি ক’রে জাগে, তা জানো? তিনি যে তোমার কত আপন, এই কথাটী আগে অন্তরে জাগাতে হবে। যে হয় আপন, তার কাছেই সম্ভব আত্মসমর্পণ, পরের কাছে আত্মসমর্পণ চলে না। পরের কাছে আত্মসমর্পণের ফল হচ্ছে বন্ধন-বেদনা, পরাধীনতার নাগপাশের পেষণ।
আর, আপন জনের কাছে আত্মসমর্পণ কল্লে তার ফল হয় পরিপূর্ণ পরিতৃপ্তি। যে হয় পরিপূর্ণ আপন, তারই কাছে সম্ভব পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ।
অখণ্ড-সংহিতা চতুর্দ্দশ খণ্ড
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : তেরো>>
……………..
আরও পড়ুন-
স্বামী স্বরূপানন্দের বাণী
স্বামী স্বরূপানন্দ : গুরু-শিষ্য
স্বামী স্বরূপানন্দ : সরল ব্রহ্মচর্য্য
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ : চিঠিপত্র
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ : উপাসনা
স্বামী স্বরূপানন্দ : কবিতা/গান
স্বামী স্বরূপানন্দ : উপদেশ
স্বামী স্বরূপানন্দ : উপদেশ দুই
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : এক
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : দুই
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : তিন
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : চার
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : পাঁচ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : ছয়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : সাত
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : আট
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : নয়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : দশ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : এগারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : বারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : তেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : চোদ্দ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : পনেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : ষোল
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : সতেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : আঠারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : উনিশ
…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………….
আরও পড়ুন-
মহানবীর বাণী: এক
মহানবীর বাণী: দুই
মহানবীর বাণী: তিন
মহানবীর বাণী: চার
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: এক
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: এক
গৌতম বুদ্ধের বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: তিন
গৌতম বুদ্ধের বাণী: চার
গুরু নানকের বাণী: এক
গুরু নানকের বাণী: দুই
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী
কনফুসিয়াসের বাণী: এক
কনফুসিয়াসের বাণী: দুই
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: এক
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: দুই
শ্রী শ্রী কৈবল্যধাম সম্পর্কে
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ১ম খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ২য় খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ৩য় খন্ড
স্বামী পরমানন্দের বাণী: এক
স্বামী পরমানন্দের বাণী: দুই
স্বামী পরমানন্দের বাণী: তিন
স্বামী পরমানন্দের বাণী: চার
স্বামী পরমানন্দের বাণী: পাঁচ
স্বামী পরমানন্দের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: এক
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: চার
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: পাঁচ
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: সাত
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: আট
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: নয়