শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : আঠারো
নামই সদ্ গুরু
লারুচো হইতে আগত জনৈক ভদ্রলোক শ্রীশ্রীবাবামণিকে দীক্ষাগুরু ও শিক্ষাগুরু সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন।
শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,- ভগবানের পরম পবিত্র নামই প্রকৃত সদ্ গুরু। তাঁকে নিয়ে ডুবে যাওয়াই সবচেয়ে পবিত্র কর্ত্তব্য। ঐ নামকেই দীক্ষাগুরু আর ঐ নামকেই শিক্ষাগুরু ব’লে জ্ঞান করা উচিত। নাম কত্তে কত্তে পরমাত্মার সেবায় জীবনোৎসর্গের একনিষ্ঠ সঙ্কল্প যখন এসে গেল, জান্ তে হবে, তখনই দীক্ষা হল।
নাম কত্তে কত্তে নামের গুণেই অন্তরের সহস্র সহস্র সমস্যার সমাধান যখন হ’তে লাগ্ ল, জান্ তে হবে, তখনই শিক্ষা হ’ল। একমাত্র নাম ছাড়া অন্য কোনও গুরুর প্রাধান্য স্বীকার করা মূর্খতা-বিশেষ। নাম পবিত্রতম, নিষ্কলুষ, অপাপবিদ্ধ বস্তু। আর মানুষ-গুরুর ভ্রম প্রতিপদে, ত্রুটী ক্ষণে ক্ষণে, দেহাত্মবোধসুলভ নানা প্রমাদ তার অবিরাম।
তাকে গুরু মনে না ক’রে নামকেই গুরু ব’লে জ্ঞান করা উচিত। নামকে শক্ত ক’রে ধর, নামকে প্রাণের পরম আরাম ব’লে জান, নামকে জীবনের চরম আশ্রয় ব’লে জ্ঞান কর, নাম-কল্পতরুর শীতল ছায়ায় তাপিত প্রাণ জুড়াও, জীবনের নব-বসন্তে নামের বিহগকাকলী শুনে কর্ণ পরিতৃপ্ত কর, অবিরাম অনুক্ষণ নাম স্মরণ ক’রে মনকে ত্রাণের পথে টেনে নাও, যখনি সুযোগ পাও ভগবানের নামকীর্ত্তন ক’রে রসনা সার্থক কর। আর সব ভুলে যাও।
অখণ্ড-সংহিতা ষষ্ঠ খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ৩৯১)
সহজতম যোগ
শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,-নিজের প্রত্যেকটী শ্বাস এবং প্রশ্বাসের পশ্চাতে ভগবৎ-শক্তির উপস্থিতি সর্ব্বক্ষণ চিন্তা কর্ল্লে বিনা ক্লেশে যোগ-সাধন হয়। এইটীই হচ্ছে সহজতম যোগ। পরমমহিমান্বিত পরমেশ্বরে তোমার ইচ্ছা-অনিচ্ছার মুখপানে না তাকিয়ে অবিরাম তোমাতে শ্বাস আর প্রশ্বাস-বায়ুর গতাগতি বিধান করছেন।
এর ভিতর দিয়ে তাঁর অস্তিত্ব তোমার নিকটে অনুক্ষণ প্রমাণিত হচ্ছে। এই শ্বাস আর প্রশ্বাসের সঙ্গে তাঁর মহামহিমান্বিত নামকে স্মরণ করাই হচ্ছে কলি-যুগের অশ্বমেধ, কলিযুগের রাজসূয়, কলিযুগের মহাক্রতু। তোমরা অপর যোগ-যাগে সময় ক্ষেপ না ক’রে এই মহাযজ্ঞে আত্মবিসর্জ্জন দাও।
অখণ্ড-সংহিতা ত্রয়োদশ খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ৯১)
মহৎকে সম্মান করিও
ঢাকা জেলান্তর্গত কোলা-নিবাসী জনৈক পত্রলেখকের পত্রের উত্তরে শ্রী শ্রী বাবামণি লিখিলেন,-
বড় কাজ হাতে লইয়া অনেকে জীবনে অসফল হইয়াছে, যাহা করিতে চাহিয়াছিল, তাহা আর করিয়া উঠিতে পারে নাই, এইরূপ দৃষ্টান্ত জগতে ভূরিভূরি রহিয়াছে। কেহ নিজ শক্তি দিয়া কোনও বিশেষ সঙ্কল্পকে পূরণ করিতে পারে নাই, ইহা তাহার পক্ষে নিন্দনীয় কিছু নহে কিন্তু সে যে সত্য সত্য মহৎ কর্ম্মের সহিত নিজেকে লগ্ন করিতে চাহিয়াছিল, ইহা তাহাকে অজস্র প্রশংসার আস্পদ করিয়া তুলিয়াছে।
এই সত্যকে তোমরা স্বীকার করিও। এই সত্যকে তোমরা সম্মান করিও। সৎকর্ম্ম হাতে লইয়া চেষ্টা সত্ত্বেও যাঁহারা সফল হন নাই, তাঁহাদিগকে তোমরা কৃপার চক্ষে দেখিও না। অনুকম্পা তাঁহাদের প্রাপ্য নহে, তাঁহাদের প্রাপ্য অবিমিশ্র শ্রদ্ধা।
প্রাণভরা প্রেম লইয়া তাঁহাদের বিষয় চিন্তা করিও, অন্তরভরা ভালবাসা লইয়া তাঁহাদের বিষয় আলোচনা করিও এবং নিজেদের শক্তিসাধ্যে যতটুকু কুলায়, ততটুকু সহযোগ এই নিমজ্জমান তরীকে ভরাডুবি হইতে বাঁচাইবার জন্য অকুণ্ঠিত চিত্তে দিও। কেহ আছাড় পড়িয়াছে দেখিলে হাসিও না, তাহাকে টানিয়া তুলিবার জন্য হাত বাড়াইও।
অখণ্ড-সংহিতা ষোড়শ খণ্ড
আমরা কি চাই
অদ্য ভিন্ন একটী গ্রামে বিরাট এক সভার অধিবেশন হইল।
শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,-আমাদের লক্ষ্য নিজ ধর্ম্মসম্প্রদায়ের জনসংখ্যা-বৃদ্ধি নয়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষ মাত্রকেই দেবত্বের পথে প্রবর্ত্তিত করা। পথের ত’অন্ত নাই। অনাদি কাল থেকে কত কত যুগন্ধর পুরুষেরা কত কত সৎপথ দেখিয়ে এসেছেন।
তার যে-কোনো একটীকে অবলম্বন ক’রে নিঃসীম ধৈর্য্য সহকারে অবিরাম পথ চলতে চলতে আমরা প্রত্যেকে পরমামৃতকে পাব। অতিচার, অবিচার, ব্যভিচার, অমিতাচার আমাদের প্রতিজনের জীবন থেকে নির্ব্বাসিত হোক্,-এইটুকুই আমরা চাই।
অখণ্ড-সংহিতা দ্বাবিংশ খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ২৭৭)
<<শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : এক
……………..
আরও পড়ুন-
স্বামী স্বরূপানন্দের বাণী
স্বামী স্বরূপানন্দ : গুরু-শিষ্য
স্বামী স্বরূপানন্দ : সরল ব্রহ্মচর্য্য
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ : চিঠিপত্র
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ : উপাসনা
স্বামী স্বরূপানন্দ : কবিতা/গান
স্বামী স্বরূপানন্দ : উপদেশ
স্বামী স্বরূপানন্দ : উপদেশ দুই
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : এক
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : দুই
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : তিন
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : চার
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : পাঁচ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : ছয়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : সাত
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : আট
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : নয়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : দশ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : এগারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : বারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : তেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : চোদ্দ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : পনেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : ষোল
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : সতেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : আঠারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : উনিশ
…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………….
আরও পড়ুন-
মহানবীর বাণী: এক
মহানবীর বাণী: দুই
মহানবীর বাণী: তিন
মহানবীর বাণী: চার
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: এক
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: এক
গৌতম বুদ্ধের বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: তিন
গৌতম বুদ্ধের বাণী: চার
গুরু নানকের বাণী: এক
গুরু নানকের বাণী: দুই
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী
কনফুসিয়াসের বাণী: এক
কনফুসিয়াসের বাণী: দুই
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: এক
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: দুই
শ্রী শ্রী কৈবল্যধাম সম্পর্কে
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ১ম খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ২য় খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ৩য় খন্ড
স্বামী পরমানন্দের বাণী: এক
স্বামী পরমানন্দের বাণী: দুই
স্বামী পরমানন্দের বাণী: তিন
স্বামী পরমানন্দের বাণী: চার
স্বামী পরমানন্দের বাণী: পাঁচ
স্বামী পরমানন্দের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: এক
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: চার
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: পাঁচ
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: সাত
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: আট
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: নয়