ভবঘুরেকথা
শাহানশাহ রাহাত আলী শাহ

শাহানশাহ রাহাত আলী শাহ

-মূর্শেদূল মেরাজ

এই মহান সাধক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধানগর গ্রামে ১৮৬২ থেকে ১৮৬৫ খৃস্টাব্দের কোনো এক সময় জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম সাল নির্দিষ্ট করে জানা যায় না। ওফাতের সময় তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৮০ বা ৮২ বছর। সে হিসেব তার জন্ম সাল ধারণা করা হয়।

রাহাত আলী শাহ’র পিতার নাম আইনুদ্দিন মোল্লা আর মাতা আয়না বিবি। দাদার নাম ছিল মোহাম্মদ হানিফ বেপারী। রাহাত আলী শাহের আসল নাম ছিল (মাদ্রাসা রেকর্ড অনুযায়ী) আবদুল আলীম। রাহাত আলী তার ডাক নাম।

দু’ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। বড় ভাই রহমত আলী। পারিবারিক সিদ্ধান্তে তাকে শিশুকালে গ্রামের মসজিদভিত্তিক স্থানীয় মক্তবে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। অল্পদিনের মধ্যেই শুধু মক্তবের পড়াই নয় পবিত্র কোরানও মুখস্থ করতে শুরু করেন রাহাত আলী।

মক্তবে পড়া শেষ হলে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল উপজেলার নাসিরনগর মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন বলে জানা যায়।

এই মহান সাধকের দেশ-বিদেশে অগনতি ভক্ত-অনুসারী থাকলেও তার সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায় না। তবে তাকে ঘিরে নানা কাহিনী ও কারামতের কথা প্রচলিত আছে।

কথিত আছে, এ সময় তিনি অলৌকিকভাবে হজরত খাজা খিজির (আ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তার কাছ থেকে মারফতের উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীতে অলৌকিকভাবে বড়পীর আবদুল কাদির জিলানী, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি, মুজাদ্দেদ আলফেসানী ও বাহাউদ্দিন নফসবন্দীর দিদার লাভ করে ফায়েজপ্রাপ্ত হন।

বলা হয়ে থাকে, শাহানশাহ রাহাত আলী শাহ মূলত ছিলেন বাকাবিন্নাহর অনুসারী। তার আধ্যাত্মিকতায় চার তরিকা একাকার হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল তরিকায়ে রাহাতিয়া। তার সাধনার ধারা ছিল আমিত্বকে বিলীন করে পরমসত্তার সাথে একাত্ম হওয়া। লীন হওয়ার পরমের সাথে এটাই মূলমন্ত্র।

শাহেনশাহ রাহাত আলী শাহর মাজারকে গিয়েই গড়ে উঠে তার জ্ঞান ও আধ্যাত্ম চর্চার প্রাণকেন্দ্র। প্রতি বছর ১৩ থেকে ১৯ শ্রাবণ লাখ লাখ ভক্ত ও আশেকানের উপস্থিতিতে ওরস উদযাপিত হয় এবং ওফাতের ৪০তম দিনে উদযাপিত হয় চল্লিশা ওরস।

জাগতিক কোনো কিছুর প্রতি তার মোহ ছিল না। তিনি সদাই থাকতেন আপন খেয়ালে। মজনুন থাকতেন আপন সাধনায়। কারো কিছুর প্রতিই তার আগ্রহ ছিল না। এমনকি ভক্ত-অনুসারীদের দেয়া জিনিসপত্রও তিনি ছুঁয়ে দেখতেন না।

সাধনায় যখন তিনি লীন হয়ে যেতেন অর্থাৎ মজনুন থাকতেন তখন দুনিয়াবি কোনো বিষয়ের প্রতিই তার খেয়াল থাকতো না। এমনকি পোষাক আশাকেরও তেমন কোন বালাই থাকতো না। মাঘ মাসের প্রচণ্ড শীতেও গায়ে কাপড় রাখতেন না।

পোশাকের মতো খাওয়া দাওয়ার প্রতিও তার কোন আগ্রহ ছিল না। জানা যায়, তিনি তেমন কিছুই খেতেন না। নামে মাত্র আহার গ্রহণ করতেন কখনো সখনো। নিজ ইচ্ছায় চেয়ে কোনো খাবার নিতেন না। ভক্তরা পীড়াপীরি করলে সামান্য আহার নিতেন তাদের মন রাখতে।

কামনা-বাসনার ঊর্ধ্বের এই সাধক ছিলেন চিরকুমার এক মহান মজনু পুরুষ। শৈশব থেকেই তার মধ্যে অলৌকিকতার প্রকাশ পেতে শুরু করে। যা পরবর্তিতে ছড়িয়ে পরলে তার কাছে মানুষ ভিড় করতে শুরু করে। ভক্ত আশেকানের মিলন মেলায় পরিণত হয় তাকে ঘিরে।

এ মহান সাধক ২ আগস্ট ১৯৪৫ খৃস্টাব্দ (১৮ শ্রাবণ ১৩৫২ বঙ্গাব্দ) রোজ শুক্রবার দেহলোক ত্যাগ করেন। তিনি যে স্থানে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তার কাছেই মাছিননগরে তাকে সমাহিত করা হয়। সেই সমাধি ঘিরেই গড়ে উঠে মাজার। আর মাজারকে কেন্দ্র করে ভক্ত-আশেকানের মিলন মেলা।

শাহেনশাহ রাহাত আলী শাহর মাজারকে গিয়েই গড়ে উঠে তার জ্ঞান ও আধ্যাত্ম চর্চার প্রাণকেন্দ্র। প্রতি বছর ১৩ থেকে ১৯ শ্রাবণ লাখ লাখ ভক্ত ও আশেকানের উপস্থিতিতে ওরস উদযাপিত হয় এবং ওফাতের ৪০তম দিনে উদযাপিত হয় চল্লিশা ওরস।

 

যাতায়াত:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে সিএনজি বা বাসে করে সড়কপথে কোম্পানিগঞ্জ, রামচন্দ্রপুর, রূপসদী বাজার হয়ে ছয়ফুল্লাকান্দি বাজার। ছয়ফুল্লাকান্দি বাজারেই রাহাত আলী শাহ্ এর মাজার।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে গোকন ঘাট হয়ে সেখান থেকে লঞ্চ বা স্পীড বোটে নবীনগর। নবীনগর সিএনজি ষ্টেশন থেকে সিএনজি করে রসূল্লাবাদ হয়ে রূপসদী বাজার হয়ে ছয়ফুল্লাকান্দি বাজার যাওয়া যায়।

এছাড়া ঢাকা থেকে বাস যোগে আড়াইহাজার উপজেলা। সেখানে থেকে করইকান্দি/করইতলা ফেরী পাড়াপাড়ের মাধ্যমে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা হয়ে ছয়ফুল্লাকান্দি বাজার যাওয়া যায়।

………………….
পুন:প্রচারে বিনীত : নূর মোহাম্মদ

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………………….
আরও পড়ুন-
হযরত শাহ্জালাল
নাসির উদ্দিন সিপাহসালার
বাবা খানজাহান আলী
শাহ মখদুম রূপোশ: এক
শাহ মখদুম রূপোশ: দুই

হযরত ছৈয়দ শাহ্ আলী বোগদাদী
হযরত কেল্লা শাহ্‌ বাবা

মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: এক
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: দুই
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: তিন
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: চার
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: পাঁচ

বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী
সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-১
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-২
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-৩
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-৪
খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়ার কাশফের নিদর্শন

মুজাদ্দিদে আলফে সানী: এক
মুজাদ্দিদে আলফে সানী: দুই
মুজাদ্দিদে আলফে সানী: তিন

শেখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী: এক
শেখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী: দুই

ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: এক
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: দুই
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: তিন
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: চার
সালমান আল-ফারেসী: এক
সালমান আল-ফারেসী: দুই
সালমান আল-ফারেসী: তিন
সালমান আল-ফারেসী: চার

উয়াইস করনি পাগল: এক
উয়াইস করনি পাগল: দুই
উয়াইস করনি পাগল: তিন
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-১
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-২
মাওলানা শ্রেষ্ঠ জালালউদ্দিন রুমি
আত্তারের সাধনার সপ্ত স্তর : এক
আত্তারের সাধনার সপ্ত স্তর : দুই
সুফিবাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ইবনে আল আরাবী
হযরত বাবা হাজী আলী
খাজা ফুজাইল : ডাকাত থেকে ওলী
সাধক বায়জিদ বোস্তামী
মরমী বুল্লেশাহ্
সারমাদ কাশানি

বাংলাদেশের প্রথম ইসলাম প্রচারক শাহ্ সুলতান
শাহানশাহ রাহাত আলী শাহ
বাবা সিরাজ শাহ্
বাবা হায়দার শাহ্
মদন পাগলার মোরতবা
মোখলেছ শাহর কারামতি
বাবা জাহাঙ্গীর

সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব এক
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব দুই
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব তিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!