ভবঘুরেকথা
ইমাম গাজ্জালী

ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন : চার

ফিকাহ

ওয়াসীত, বাসীত, ওয়াজীয, বয়ানুল কাওলায়নিলিশ শাফীঈ তা’লীকাতুন ফি-ফুরুইল মযহাব, খোলাসাতুর রাসাইল, ইখতিসারুল, মুখতাসার, গায়াতুল গাওর, মজমুআতুল ফতাওয়া।

 

ফিকাহ শাস্ত্রের মূলনীতি

তাহসিনুল মাখাজ, সিফাউল আলীল, মুন্তাখাল ফি ইলমিল জিদল, মনখুল, মুসতাসফা, মাখায় ফিল খিলাফিয়াত, মোফাসসালুল খিলফি ফি উসুলিল কিয়াস।

 

মানতিক

মিয়ারুল ইলম, মীযানুল, আ’মল (ইউরোপে প্রাপ্তব্য)

 

দর্শন

মাকাসিদুল ফালাসিফাহ, তাহাফুতুল ফালাসিফাহ (ইউরোপে সংরক্ষিত)।

 

ইলমি কালাম

আহাতাফুল ফালাসিফাহ, মুনকিয, ইলজামুল আওয়াম ইকতিসাদু, মসতাযহারী ফাযাইহুল ইবাহিয়্যাহ হাকিকাতুর রূহ, কিসতাসুল মুসতাকিম, কাওলুল জমিল ফি রাদ্দিনআলামান গায়্যারাল ইন্জিল, মাওয়াহিবুল বাতিনিয়্যাহ, তাফাররাকাতুম বায়নাল ইসলামি ওয়াল জিন্দিকাহ, আর রিসাতুল কুদসিয়াহ।

 

আধ্যাত্নিক ও নৈতিক বিষয়

ইয়াহয়েওমুল উলুম, কিমিয়ায়ে সাআদাত, আল মাকসুদুল আকসা, আখলাকুল আবরার, জওয়াহিরুল কুরআন, জওয়াহিরুলকুদসি ফী হাকীকাতিন্নাফস, মিশকাতুলআনওয়ার, মিনহাজুল আবেদীন, মিরাজুস সালিকীন, নাসীহাতুল মূলক, আয়্যুহালওলাদ, হিদায়াতুল হিদায়াহ,মিশকাতুল আনওয়ার, ফী লাতাইফিল আখয়ার।

নিশাপুর অবস্থানকালে, ইমাম গাজ্জালী গ্রন্থাদি রচনা শুরু করেন। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের যে জড়বাদ বিশেষত গ্রীক দার্শনিকদের ভ্রান্ত মতবাদ মুসলমানদের ধর্ম-বিশ্বাসে প্রবেশ করেছিল। এ সময়েই তিনি অতিসুন্দর ও সূক্ষ্ম যুক্তিপূর্ণ বিচারে ‘মনখুল’ (চালনি দ্বারা চালা) নামক গ্রন্থ রচনা করে। এইসব দোষত্রুটির মূলুৎপাটন করার প্রয়াস পান।

প্রথম জীবনের লেখা হলেও ইহাসুধি উচ্চপ্রশংসা অর্জন করে। এমনকি তার ওস্তাদ হযরত ইমানুল হারামাইন স্বয়ং এই গ্রন্থ পাঠে মন্তব্য করেন, “জীবতাবস্থায়ই তুমি সমাধিস্থ করিলে।” অর্থাৎ ছাত্রের খ্যাতি ওস্তাদের জীবদ্দশায়ই তার খ্যাতিকে অতিক্রম করে গেল।

ইমাম গাজ্জালীর রচিত “ইয়াহইয়উল উলুমুদ্দীন” গ্রন্থখানি ইসলাম জগতে বিশেষ সমাদৃত। এ গ্রন্থ সম্পর্কে শীর্ষস্থানীয় কতিপয় মনীষীর উক্তি হল, “জগতের সমস্ত জ্ঞান প্রদীপ নির্বাপিত করে দিলে কেবল ‘ইয়াহইয়উল উলুমুদ্দীন’ দ্বারাই উহা পুনরুদ্ধার করা যাবে। ইয়াহইয়উল উলুমুদ্দীন-এর পূর্ব এরূপ গ্রন্থজগতে আর লিখিত হয়নি। ইয়াহইয়উল উলুমুদ্দীন কোরান শরীফের কাছেবর্তী গ্রন্থ।”

জগদ্বিখ্যাত সিদ্ধপুরুষ গাজ্জালী একদা জনতাকে সম্বোধন করে বললেন, আমার হাতে কোন গ্রন্থ তোমরা জান কি? ইহা “ইয়াহইয়উলউলুমুদ্দীন”। গ্রন্থখানিকে অবজ্ঞা করার কারণে আমার বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে অভিযোগ করা হয়। স্বপ্নযোগে দেখলাম, বিচারে আমার পিঠে চাবুক মারা হয়েছে। এই দেখ, আমার পিঠে চাবুকের চিহ্ন দৃশ্যমান।

“কিমিয়ায়া সাদাত” ইমাম গাজ্জালীর অপর একখানি অত্যন্ত জনপ্রিয় গ্রন্থ। দুনিয়ার প্রায় সকল ভাষায় এই মূল্যবান গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বার্ন শহরে লেটিন ভাষায় ইহা সর্বপ্রথম অনূদিত হয় এবং অধ্যাপক হিথজীন এর কঠিন শব্দসমূহের ভাষ্য রচনা করেন।

তার রচিত ‘মাকাসিদুল-ফালাসিফা’, ‘তাহাফুতুল-ফালাসিফা’ প্রভৃতি দর্শনশাস্ত্রের বই সমগ্র ইউরোপে সমাদৃত হয়েছে এবং ইংরেজি, ফারসী, ল্যাটিন, হিব্রু ইত্যাদি ভাষায় অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই সকল গ্রন্থ ইউরোপীয় বহু বক্রপন্থী পণ্ডিতের জ্ঞানচক্ষু প্রস্ফুটিত করে দিয়েছে।

জনৈক ইউরোপীয় পণ্ডিত বলেছেন, ইমাম গাজ্জালী ও ইবনে রুশদের জন্ম না হলে মসুলমানরা নিউটন ও এরিষ্টটলের জাতি হয়েই থাকত। বস্তুত পাশ্চাত্যের জড়বাদী দার্শনিক মতবাদের মোকাবিলায় খাঁটি দর্শনকে বলিষ্ঠ যুক্তিতে প্রকাশ করে ইমাম গাজ্জালী বিশ্ব মানবের মূল্যবোধ ও চিন্তাধারায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করেন। বিশেষত আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও চিন্তাধারাকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে তিনি মানব ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন।

মুসলিম বিশ্ব অপেক্ষা খ্রিস্টান ইউরোপেই ইমাম গাজ্জালীর গ্রন্থাবলী সমাদৃত বেশি। প্রখ্যাত কবি দান্তে, মনীষী রেমন্ড মার্টিন, মনীষীসেন্ট টমাস একুইনাস, প্রখ্যাত ফরাসি মিসটিক ব্লেইসি প্যাসকেল ইমাম গাজ্জালীর গ্রন্থরাজি থেকেই এর যুক্তি ও উদাহরণ গ্রহণ করেন এবং তার মতামতকেই প্রামান্য বলেই উল্লেখ করেন। তার ৪০টি গ্রন্থ ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত ও প্রকাশিত হয়।

“কিমিয়ায়া সাদাত” ইমাম গাজ্জালীর অপর একখানি অত্যন্ত জনপ্রিয় গ্রন্থ। দুনিয়ার প্রায় সকল ভাষায় এই মূল্যবান গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বার্ন শহরে লেটিন ভাষায় ইহা সর্বপ্রথম অনূদিত হয় এবং অধ্যাপক হিথজীন এর কঠিন শব্দসমূহের ভাষ্য রচনা করেন।

 

শোকের ছায়া

বাগদাদে অবস্থিত ইমাম গাজ্জালীর পবিত্র মাজার শরীফ। সোমবার মাহে জামাদাল উখরা, হিজরী ৫০৫ সাল মোতাবেক ১৯ ডিসেম্বর ১১১১ খ্রিস্টাব্দ। ফজরের নামাজ সমাপনান্তে সমগ্র বিশ্বের বিশ্বয়কর প্রতিভা, যুক্তি ও যুক্তিবাদী অপ্রতিদ্বন্দ্বী দার্শনিক, বিশ্ব মানবতারদিশারী, সুফীকুল শিরমনি হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম আবু হামিদ মুহম্মদ গাজ্জালী মাত্র ৫৫ বছর বয়সে দুনিয়াবাসীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পরম করুণাময় আল্লাহর সান্নিধ্যে হাজির হন। সম্পূর্ণ সুস্থদেহেই তিনি দেহত্যাগ করেন।

তার তিরোধান সম্পর্কে তার ভাই হযরত ইমাম আহমদ বলেন, সোমবার দিন অতিপ্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করে তিনি স্বভাবসিদ্ধ অভ্যাস অনুসারে অজু করে ফজরের নামাজ আদায় করেন।

তৎপর পুর্বপ্রস্তুত করা তার কাফনটি চেয়ে নেন এবং ইহা চোখে স্পর্শ করে বললেন, প্রভুর আদেশ শিরোধার্য। কথাটি মুখ থেকে নিঃসৃত হওয়ার সাথে সাথে তিনি নিজ পা প্রসারিত করলেন এবং সেই মুহুর্তেই ইহজগৎ ত্যাগ করলেন। পরম করুনাময় আল্লাহ পাক তাকে ইহজগত পর জগতেযথাযোগ্য মর্যাদা দান করুন।

(সমাপ্ত)

<<ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: এক

……………………………..
আরো পড়ুন: 
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: এক
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: দুই
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: তিন
……………………………..

………………….
পুন:প্রচারে বিনীত : নূর মোহাম্মদ

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………………….
আরও পড়ুন-
হযরত শাহ্জালাল
নাসির উদ্দিন সিপাহসালার
বাবা খানজাহান আলী
শাহ মখদুম রূপোশ: এক
শাহ মখদুম রূপোশ: দুই

হযরত ছৈয়দ শাহ্ আলী বোগদাদী
হযরত কেল্লা শাহ্‌ বাবা

মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: এক
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: দুই
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: তিন
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: চার
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: পাঁচ

বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী
সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-১
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-২
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-৩
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-৪
খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়ার কাশফের নিদর্শন

মুজাদ্দিদে আলফে সানী: এক
মুজাদ্দিদে আলফে সানী: দুই
মুজাদ্দিদে আলফে সানী: তিন

শেখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী: এক
শেখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী: দুই

ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: এক
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: দুই
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: তিন
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: চার
সালমান আল-ফারেসী: এক
সালমান আল-ফারেসী: দুই
সালমান আল-ফারেসী: তিন
সালমান আল-ফারেসী: চার

উয়াইস করনি পাগল: এক
উয়াইস করনি পাগল: দুই
উয়াইস করনি পাগল: তিন
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-১
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-২
মাওলানা শ্রেষ্ঠ জালালউদ্দিন রুমি
আত্তারের সাধনার সপ্ত স্তর : এক
আত্তারের সাধনার সপ্ত স্তর : দুই
সুফিবাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ইবনে আল আরাবী
হযরত বাবা হাজী আলী
খাজা ফুজাইল : ডাকাত থেকে ওলী
সাধক বায়জিদ বোস্তামী
মরমী বুল্লেশাহ্
সারমাদ কাশানি

বাংলাদেশের প্রথম ইসলাম প্রচারক শাহ্ সুলতান
শাহানশাহ রাহাত আলী শাহ
বাবা সিরাজ শাহ্
বাবা হায়দার শাহ্
মদন পাগলার মোরতবা
মোখলেছ শাহর কারামতি
বাবা জাহাঙ্গীর

সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব এক
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব দুই
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব তিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!