ভবঘুরেকথা
সুফি সাধক উপাসনা

সালমান আল-ফারেসী: এক

নবী মোহাম্মদ বলেছেন, ‘সালমান নবী পরিবারেরই একজন।’

এটি একজন সত্য-সন্ধানী ও আল্লাহকে পাওয়ার অভিলাষী এক ব্যক্তির জীবন কথা। তিনি হজরত সালমান আল-ফারেসী। সালমান আল-ফারেসীর জবানেই তাঁর সেই সত্য প্রাপ্তির চমকপ্রদ বর্ণনা রয়েছে। তিনি বলেন-

আমি তখন পারস্যের ইসফাহার অঞ্চলের একজন পারসী নওজোয়ান। আমার গ্রামটির নাম ‘জায়্যান’। বাবা ছিলেন গ্রামের দাহকান-সর্দার। সর্বাধিক ধনবান ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। জন্মের পর থেকেই আমি ছিলাম তাঁর কাছে আল্লাহর সৃষ্টিজগতের মধ্যে সবচে বেশি প্রিয়।

আমার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমার প্রতি তাঁর স্নেহ ও ভালবাসাও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে কোন অমঙ্গলের আশংকায় তিনি আমাকে মেয়েদের মত ঘরে আবদ্ধ করে রাখেন।

আমার বাবা-মার মাজুসী ধর্মে আমি কঠোর সাধনা শুরু করলাম এবং আমাদের উপাস্য আগুনের তত্ত্বাবধায়কের পদটি খুব তাড়াতাড়ি অর্জন করলাম। রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা উপাসনার সেই আগুন জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্বটি আমার ওপর অর্পিত হয়।

আমার বাবা ছিলেন বিরাট ভূ-সম্পত্তির মালিক। তিনি নিজেই তা দেখাশোনা করতেন। তাতে আমাদের প্রচুর শস্য উৎপন্ন হতো। একদিন কোন কারণ বশত তিনি বাড়িতে আটকে গেলেন, গ্রামের খামারটি দেখাশোনার জন্য যেতে পারলেন না। আমাকে ডেকে তিনি বললেন-

‘বেটা! তুমি তো দেখতেই পাচ্ছো, বিশেষ কারণে আজ আমি খামারে যেতে পারছি না। আজ বরং তুমি একটু সেখানে যাও এবং আমার তরফ থেকে সেখানকার কাজকর্ম তদারক কর।’

আমি খামারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। পথে খৃষ্টানদের একটি গীর্জার পাশ দিয়ে যাবার সময় তাদের কিছু কথার আওয়াজ আমার কানে ভেসে এলো। তারা তখন প্রার্থনা করছিল। এ আওয়াজই আমাকে সচেতন করে তোলে।

আমি সুযোগের প্রতীক্ষায় ছিলাম। কিছুদিনের মধ্যেই সে সুযোগ এসে গেল। গোপনে খৃস্টানদের কাছে এই বলে সংবাদ পাঠালাম যে, শাম অভিমুখী কোন কাফেলা তাদের কাছে এলে তারা যেন আমাকে খবর দেয়।

দীর্ঘদিন ঘরে আবদ্ধ থাকার কারণে খৃষ্টান অথবা অন্য কোন ধর্মাবলম্বীদের সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞানই ছিল না। তাদের কথার আওয়াজ শুনে তারা কি করছে তা দেখার জন্য আমি গীর্জার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলাম। গভীরভাবে তাদেরকে আমি নিরীক্ষণ করলাম।

তাদের প্রার্থনা পদ্ধতি আমার খুবই ভালো লাগলো এবং আমি তাদের ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম। মনে মনে বললাম- আমরা যে ধর্মের অনুসারী তা থেকে এ ধর্ম অতি উত্তম। আমি খামারে না গিয়ে সে দিনটি তাদের সাথেই কাটিয়ে দিলাম।

তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম-এ ধর্মের মূল উৎস কোথায়?

-শামে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আমি বাড়িতে ফিরে আসলাম। সারাদিন আমি কি কি করেছি, বাবা তা আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন।

বললাম- ‘বাবা কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় দেখতে পেলাম তারা তাদের উপাসনালয়ে প্রার্থনা করছে। তাদের ধর্মের যেসব ক্রিয়াকাণ্ড আমি প্রত্যক্ষ করেছি তা আমার খুবই ভালো লেগেছে। বেলা ডোবা পর্যন্ত আমি তাদের সাথেই কাটিয়ে দিয়েছি।’

আমার কথা শুনে বাবা শংকিত হয়ে পড়লেন। তিনি বললেন- ‘বেটা! সে ধর্মে কোন কল্যাণ নেই, তোমার ও তোমার পিতৃপুরুষের ধর্ম তা থেকেও উত্তম।’ বললাম, ‘আল্লাহর শপথ! কখনো তা নয়। তাদের ধর্ম আমাদের ধর্ম থেকেও উত্তম।’

আমার কথা শুনে বাবা ভীত হয়ে পড়লেন এবং আমি আমার ধর্ম ত্যাগ করতে পারি বলে তিনি আশংকা করলেন। তাই আমার পায়ে বেড়ি লাগিয়ে ঘরে বন্দি করে রাখলেন।

আমি সুযোগের প্রতীক্ষায় ছিলাম। কিছুদিনের মধ্যেই সে সুযোগ এসে গেল। গোপনে খৃস্টানদের কাছে এই বলে সংবাদ পাঠালাম যে, শাম অভিমুখী কোন কাফেলা তাদের কাছে এলে তারা যেন আমাকে খবর দেয়।

কিন্তু যখন তারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার জন্য তার হাতে কিছু তুলে দেয়। তখন সে নিজেই তা আত্মসাত করে এবং নিজের জন্য পুঞ্জীভূত করে রাখে। অভাবীদের সে কিছুই দেয় না। এভাবে সে সাত কলস স্বর্ণ পুঞ্জীভূত করে।

কিছুদিনের মধ্যেই শাম অভিমুখী একটি কাফেলা তাদের কাছে এলো। তারা আমাকে সংবাদ দিল। আমি আমার বন্দিদশা থেকে পালিয়ে গোপনে তাদের সাথে বেরিয়ে পড়লাম। তারা আমাকে শামে পৌঁছে দিল। শামে পৌঁছে আমি জিজ্ঞেস করলাম-

-এ ধর্মের সর্বোত্তম ও সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী ব্যক্তি কে?

তারা বললো- বিশপ, গীর্জার পুরোহিত।

আমি তাঁর কাছে গেলাম। বললাম- আমি খৃষ্টধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। আমার ইচ্ছা, আপনার সহচর্যে থেকে আপনার সেবা করা, আপনার কাছ থেকে শিক্ষালাভ ও আপনার সাথে প্রার্থনা করা।

তিনি বললেন- ভেতরে এসো।

আমি ভেতরে ঢুকে তার কাছে গেলাম এবং তার সেবা শুরু করে দিলাম। কিছুদিন যেতে না যেতেই আমি বুঝতে পারলাম লোকটি অসৎ। কারণ সে তার সঙ্গী সাথীদেরকে দান-খয়রাতের নির্দেশ দেয়। সওয়াব লাভের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে।

কিন্তু যখন তারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার জন্য তার হাতে কিছু তুলে দেয়। তখন সে নিজেই তা আত্মসাত করে এবং নিজের জন্য পুঞ্জীভূত করে রাখে। অভাবীদের সে কিছুই দেয় না। এভাবে সে সাত কলস স্বর্ণ পুঞ্জীভূত করে।

(চলবে…)

সালমান আল-ফারেসী: দুই>>

……………………………….
আরো পড়ুন:
সালমান আল-ফারেসী: এক
সালমান আল-ফারেসী: দুই
সালমান আল-ফারেসী: তিন
সালমান আল-ফারেসী: চার

……………………………….
স্থিরচিত্র: সংগ্রহ

** সালমান আল-ফারেসীর কোনো ছবি পাওয়া যায় না। লেখায় ব্যবহৃত ছবির সাথে ফারেসীর কোনো সম্পর্ক নেই।

………………….
পুন:প্রচারে বিনীত : নূর মোহাম্মদ

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………………….
আরও পড়ুন-
হযরত শাহ্জালাল
নাসির উদ্দিন সিপাহসালার
বাবা খানজাহান আলী
শাহ মখদুম রূপোশ: এক
শাহ মখদুম রূপোশ: দুই

হযরত ছৈয়দ শাহ্ আলী বোগদাদী
হযরত কেল্লা শাহ্‌ বাবা

মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: এক
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: দুই
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: তিন
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: চার
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: পাঁচ

বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী
সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-১
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-২
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-৩
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-৪
খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়ার কাশফের নিদর্শন

মুজাদ্দিদে আলফে সানী: এক
মুজাদ্দিদে আলফে সানী: দুই
মুজাদ্দিদে আলফে সানী: তিন

শেখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী: এক
শেখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী: দুই

ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: এক
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: দুই
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: তিন
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: চার
সালমান আল-ফারেসী: এক
সালমান আল-ফারেসী: দুই
সালমান আল-ফারেসী: তিন
সালমান আল-ফারেসী: চার

উয়াইস করনি পাগল: এক
উয়াইস করনি পাগল: দুই
উয়াইস করনি পাগল: তিন
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-১
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-২
মাওলানা শ্রেষ্ঠ জালালউদ্দিন রুমি
আত্তারের সাধনার সপ্ত স্তর : এক
আত্তারের সাধনার সপ্ত স্তর : দুই
সুফিবাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ইবনে আল আরাবী
হযরত বাবা হাজী আলী
খাজা ফুজাইল : ডাকাত থেকে ওলী
সাধক বায়জিদ বোস্তামী
মরমী বুল্লেশাহ্
সারমাদ কাশানি

বাংলাদেশের প্রথম ইসলাম প্রচারক শাহ্ সুলতান
শাহানশাহ রাহাত আলী শাহ
বাবা সিরাজ শাহ্
বাবা হায়দার শাহ্
মদন পাগলার মোরতবা
মোখলেছ শাহর কারামতি
বাবা জাহাঙ্গীর

সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব এক
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব দুই
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব তিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!