রামনাথের ভিটা : এক
-মূর্শেদূল মেরাজ
বাঙালীর ছেলে শংকরের আফ্রিকা অভিযানের গল্প পড়েছিলাম ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ার সময়। সম্ভবত ক্লাস ফাইনালের পরে হাতে পেয়েছিলাম বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড় বইটি। সেই রোমাঞ্চ… সেই অনুভূতির কথা বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়…। তখনো ভাবতাম আমাদের দেশে এমন চরিত্র কেবল গল্প-উপন্যাস বড় জোর চলচ্চিত্রেই সম্ভব। তারও বহু বহু বহু বহু বছর পর জেনেছিলাম রামনাথ বিশ্বাসের কথা।
কেবল ভারতবর্ষ নয় খোদ বাংলাদেশের ছেলে রামনাথ বিশ্বাস বিশ্বভ্রমণ করেছিলেন সাইকেলে চেপে! প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি। ভেবেছিলাম গল্পের চরিত্র। তারও পরে ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই জোড়াসাঁকোর মতো বিশাল জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। তারও অনেক পরে জেনেছিলাম নাহ্ সবই ভুল। কিছুই জানি না রামনাথ বিশ্বাস সম্পর্কে। তারও বহু বহু বহু বছর পর আজ এই ২০১৪ সালের শেষ লগ্নে আমি দাঁড়িয়ে আছি রামনাথের ভিটায়। সত্যি সত্যিই তাই। ঘটনা সত্য। আমি এখন রামনাথের ভিটায়।
এক বিন্দু মিথ্যা বা কল্পনা নয় সত্যি সত্যি রামনাথের ভিটায় আমি! সত্যি তো? আসলেই কি সত্যি? নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না, তারপরও কি আর করা বাস্তবতা এটাই। মেনে নিতেই হবে। আলো ফোটার আগেই শায়েস্তাগঞ্জের পেট্রোল পাম্পের মোড়ে আমাদের নামিয়ে দিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে শ্যামলী পরিবহনের বাস। কিছুক্ষণ আমরা এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করে একটা ছোট্ট হোটেলে বসে গল্প শুরু করে দিলাম।
ইতোমধ্যে শীতটা বেশ জমিয়ে বসেছে। ভোরের আলো ফোঁটার পর আমরা হবিগঞ্জ যাবো সেখান থেকে বানিয়াচং। আমরা বলতে আমরা চারজন। আমি শাহিনভাই, ….. ভাই আমি আর ভাগ্নে মদন।
কুমোর-পাড়ার গোরুর গাড়ি
বোঝাই-করা কলসি-হাঁড়ি।
গাড়ি চালায় বংশীবদন
সঙ্গে-যে যায় ভাগ্নে মদন।
রবী ঠাকুর কিছুই বাদ দেন নাই আমাদের ভাগ্নে মদনের জন্য লাইন লিখে গেছেন আচানক কান্ডরে ভাই।
তেমনি এক সভায় রামনাথ বলেছিলেন, “আমাদের বানিয়াচং পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গ্রাম। এটা আমাদের ও সমগ্র দেশের গৌরব। আমেরিকার শিকাগো শহরের কাছে অনেক বছর আগে বানিয়াচং-এর চেয়ে বড় একটি গ্রাম ছিল। কিন্তু এখন সেটা আর গ্রাম নয়, শহরভুক্ত হয়ে গেছে।“
শায়েস্তাগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ… হবিগঞ্জ হয়ে এখন আমরা বানিয়াচং গ্রামে… পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্রাম বানিয়াচং-এ! আবারো বিশ্বয়! বানিয়াচং সত্যিই পৃথিবীর বড় গ্রাম কিনা, হলে কেনো, না হলে কেনো নয়, এর জনসংখ্যা, ব্যাপ্তি, গ্রাম-ইউনিয়ন-থানা, গিনিজ রেকর্ড এসব নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে। সেসবের কোনটা সত্য কোনটা সত্য নয় সেসব অন্য আলোচনা।
তবে মজার তথ্যটি হচ্ছে ভূ-পর্যটক রামনাথ বিশ্বাস তার এক বক্তিয়ায় এই কথা উল্লেখ করেছিলেন। জানা যায় দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করার ফাঁকে সুযোগ পেলেই চলে আসতেন নিজ গ্রামে এবং স্থানীয় এড়ালিয়া মাঠে জনসভার আয়োজন করে নিজ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতেন। তেমনি এক সভায় রামনাথ বলেছিলেন, “আমাদের বানিয়াচং পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গ্রাম। এটা আমাদের ও সমগ্র দেশের গৌরব।
আমেরিকার শিকাগো শহরের কাছে অনেক বছর আগে বানিয়াচং-এর চেয়ে বড় একটি গ্রাম ছিল। কিন্তু এখন সেটা আর গ্রাম নয়, শহরভুক্ত হয়ে গেছে।“ বানিয়াচং-এর সাথে রামনাথ বিশ্বাসের সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ট যদিও আজকের বানিয়াচংবাসী রামনাথের নামও ঠিকমতো জানে না। সেটা আশ্চর্য্যের কিছুই নয়। কারণ আমরাই কতটা মনে রেখেছি রামনাথের কথা। কতটা জানি রামনাথ সম্পর্কে।
তিনি তার ভ্রমণ নিয়ে যে গ্রন্থগুলো লিখেছেন সেগুলোও কি সব আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি? অনুবাদ করতে পেরেছি সে সকল গ্রন্থগুলো যেগুলো এখনো সংগ্রহ করা সম্ভব। কবীর সুমন খুব সহজ ভাবেই বলেছেন- প্রশ্নগুলো সহজ… উত্তরও জানা। আসলেই তাই… শাহীন ভাই জানালো স্থানীয় সালেহ ভাই আমাদের সঙ্গী হবেন এখান থেকে। বানিয়াচং ঘুরে দেখাবেন তিনি।
সালেহ ভাই আসতে আসতে আমরা কমলা রাণীর সাগরদীঘিটা নীল জল এক ঝঁলক দেখে চোখ শেকে নিলাম। আরো জানি কি কি দেখার ছিল কিন্তু সালেহ ভাই চলে আসবেন তাই শাহিন ভাই আমাদের প্রায় টানতে টানতে নিয়ে চললো বড় বাজারের দিকে। আজ আমাদের বেশ ব্যস্ত সময় কাটাতে হবে। একদিনে অনেক কিছু দেখে বা দেখার চেষ্টা করে রাতেই ফিরতে হবে হবিগঞ্জ থেকে।
এর মধ্যে দেখতেই হবে ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের জন্মভিটা, লক্ষ্মীবাউর সোয়াম্প ফরেস্ট, বিথঙ্গল আখড়া আর সময় হলে দিল্লীর আখড়াও দেখবো। লক্ষ্মীবাউর সোয়াম্প ফরেস্ট নাকি অস্বাধারণ।
চলবে…
…………………………….
আরও পড়ুন-
রামনাথের ভিটা : এক
রামনাথের ভিটা : দুই
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
………………………….
আরও পড়ুন-
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব এক
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব দুই
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব তিন
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব চার
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব পাঁচ
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব ছয়
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব সাত
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব আট
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব নয়
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব দশ
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব এগারো
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব বারো
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব তেরো
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব চোদ্দ
………………………..
আরও পড়ুন-
ভবঘুরে খেরোখাতা: পর্ব এক
ভবঘুরে খেরোখাতা: পর্ব দুই
মনোমোহনের পথে : প্রথম কিস্তি
মনোমোহনের পথে : দ্বিতীয় কিস্তি
মনোমোহনের পথে : তৃতীয় কিস্তি
দয়াময় থেকে দয়ালের দরবারে : কিস্তি এক
দয়াময় থেকে দয়ালের দরবারে : কিস্তি দুই
শাহান শাহ্’র দরবারে : পর্ব এক
শাহান শাহ্’র দরবারে – পর্ব দুই
লোকনাথ বাবার আশ্রম হয়ে মহারাজের আশ্রমে : এক
লোকনাথ বাবার আশ্রম হয়ে মহারাজের আশ্রমে : দুই
লোকনাথ বাবার আশ্রম হয়ে মহারাজের আশ্রমে : তিন
সীতাকুণ্ডের ঝড়ঝড়িতে গড়াগড়ি- এক
সীতাকুণ্ডের ঝড়ঝড়িতে গড়াগড়ি- দুই
সীতাকুণ্ডের ঝড়ঝড়িতে গড়াগড়ি : তিন
সীতাকুণ্ডের ঝড়ঝড়িতে গড়াগড়ি : চার
সীতাকুণ্ডের ঝড়ঝড়িতে গড়াগড়ি : পাঁচ
নিরা গোঁসাইয়ের মতুয়া মহাসম্মেলন- এক
নিরা গোঁসাইয়ের মতুয়া মহাসম্মেলন- দুই
সাঁইজির ধাম হয়ে পাককোলা- এক
সাঁইজির ধাম হয়ে পাককোলা- দুই
টকিমোল্লায় গানে আসর
ফর্সা হাজীতে আরেক দফা
সাঁইজির ধাম হয়ে নহির সাঁইজির হেমাশ্রমে-এক
সাঁইজির ধাম হয়ে নহির সাঁইজির হেমাশ্রমে-দুই
সাঁইজির ধাম হয়ে নহির সাঁইজির হেমাশ্রমে-তিন
সাঁইজির ধাম হয়ে নহির সাঁইজির হেমাশ্রমে-চার
সাঁইজির ধাম হয়ে নহির সাঁইজির হেমাশ্রমে-পাঁচ