রামনাথের ভিটা : দুই
-মূর্শেদূল মেরাজ
রাতারগুলের চাইতেও বিশাল এলাকা নিয়ে এটি। লক্ষ্মীবাউর সোয়াম্প ফরেস্ট এখনো পর্যটকদের তালিকায় স্থান না পাওয়ায় বাড়তি উৎপাতের সম্ভবনা কম। বেশ আরাম করে দেখা যাবে। তবে শোনা যাচ্ছে ভরা বর্ষায় না এসে ভুল করেছি আমরা। এখন মাছ ধরার জন্য বেড়া দিয়ে দেয়া হয়েছে। আসলে কিছু দেখা যাবে কিনা কে জানে। এসব ভাবতে ভাবতেই সালেহ ভাই উপস্থিত।
টুক করে পরিচয় পর্বটা সেরে টমটম নিয়ে তার সাথে আমরা রওনা দিলাম বিদ্যাভূষণ পাড়ায় অর্থাৎ অনেক কাঙ্খিত রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িতে। বিদ্যাভূষণ পাড়া অদ্ভূত নাম তাই না? নামটাই বলে এই পাড়ার ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। টমটম চলতে চলতে সাহেল ভাই-এর সাথে আলাপ জমে উঠলো। সকালের সুখি সুখি বাতাসে ভেসে ভেসে আমরা চলেছি রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িতে। ভাবা যায়…
পথে যেতে যেতেই জানলাম এখন রামনাথ বিশ্বাসের বসত বাড়িটি দখল হয়ে গেছে। তার কোনো এক আত্মীয় অবশ্য আছে পাশের একটি বাড়িতে। তিনি শিক্ষকতা করেন। ভ্রমণের বেরমটা এই বিশ্বাস পরিবারের অন্য কারো শরীরে ছিল? আছে? সে জানে। হয়তো বা হয়তো না… টমটম চলছে টমটমিয়ে আমরা ঠনঠনিয়ে।
ভাবছি সেই কবে রামনাথ হয়তো এই পথ দিয়েই সাইকেল চালিয়ে গিয়েছিলেন কোন অজানায় কে জানে। রামনাথ বিশ্বাস কে? কতটা জানি আমরা তাকে? কতটা আবিস্কার করতে পেরেছি তাকে? কতটা মর্যাদা দিতে পেরেছি তাকে। তার সম্পর্কে যতটা জানা গেছে তার মধ্যে অসংখ্যবার ‘সম্ভবত’ শব্দটা ব্যবহার করতে হয় এখনো।
যাই হোক সম্ভবত দিয়েই শুরু করি। সম্ভবত ১৩ জানুয়ারি ১৮৯৪ সালে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং এর বিদ্যাভূষন পাড়ায় বিরজানাথ বিশ্বাস ও গুণময়ী দেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন রামনাথ বিশ্বাস। স্থানীয় বিদ্যালয়েই শিক্ষাজীন শুরু। কর্মজীবন শুরু করেন হবিগঞ্জের জাতীয় ভান্ডার সমিতির ম্যানেজার পদে। এসময়ই তিনি সাইকেল চালনার বেশ পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
সেখান থেকে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৪০ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ৪৭ সালে দেশ ভাগের পরে তিনি কলকাতায় চলে যান। সম্ভবত তার ভ্রমণ বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশের কোনো প্রকাশক না পেয়ে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। ১ নভেম্বর ১৯৫৫ তিনি দেহ ত্যাগ করেন।তিনি সাইকেল ভ্রমনের কাহিনী নিয়ে গল্প ও উপন্যাস মিলিয়ে ৪০ টির ও বেশি বই লিখেন। যেখানে রয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ১২ কিমি পথভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
কিছুদিন পরেই অবশ্য ভান্ডারের চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চাকরীতে যোগ দেন। সম্ভবত এই সময়েই তিনি গোপনে অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের যুক্ত হয়ে পরেন। কিন্তু বিধিবাম তার বিপ্লবী যোগ প্রকাশ যায় অল্পদিনেরই। পরিণতিতে চাকরিটা চলে যায়। এসময় শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ… অগত্যা তিনিও যুদ্ধে যোগ দেন। বাঙালি পল্টনের সঙ্গে তিনি মেসোপটেমিয়ায় যান।
সম্ভবত ১৯২৪ সালে তিনি মালয়ে বৃটিশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৩১ সালে ‘রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড, হিন্দু ট্রাভেলার’ লেখা সাইকেল নিয়ে বেড়িযে পরেন বিশ্ব ভ্রমণে। ৭ জুলাই সিঙ্গাপুরের কুইন স্ট্রীট থেকে সাইকেলে চড়ে তিনি মালয়, শ্যাম, ইন্দোচীন, চীন, কোরিয়া, জাপান হয়ে কানাডা পৌঁছান।
পরবর্তী ১৯৩৪ সালে আফগানিস্থান, পারস্য, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, তুরস্ক, বুলগেরিয়া, যুগোস্লাভিয়া, হাঙ্গেরী, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, জার্মানি, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স হয়ে ইনল্যান্ড যান। ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড তিনি সাইকেলে পরিভ্রমণ করেন। পরবর্তী ১৯৩৮ সালে মুম্বই থেকে তিনি জাহাজে আফ্রিকার মোম্বাসায় যান। সেখান থেকে সাইকেলে কেনিয়া, উগান্ডা, নায়াসাল্যান্ড, রোডেসিয়া হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছান।
সেখান থেকে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৪০ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ৪৭ সালে দেশ ভাগের পরে তিনি কলকাতায় চলে যান। সম্ভবত তার ভ্রমণ বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশের কোনো প্রকাশক না পেয়ে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। ১ নভেম্বর ১৯৫৫ তিনি দেহ ত্যাগ করেন।তিনি সাইকেল ভ্রমনের কাহিনী নিয়ে গল্প ও উপন্যাস মিলিয়ে ৪০ টির ও বেশি বই লিখেন। যেখানে রয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ১২ কিমি পথভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
(সমাপ্ত)
…………………………….
আরও পড়ুন-
রামনাথের ভিটা : এক
রামনাথের ভিটা : দুই
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
………………………….
আরও পড়ুন-
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব এক
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব দুই
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব তিন
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব চার
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব পাঁচ
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব ছয়
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব সাত
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব আট
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব নয়
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব দশ
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব এগারো
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব বারো
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব তেরো
গাবতলী টু গুলিস্তান ৬০০ কিলোমিটার : পর্ব চোদ্দ
………………………..
আরও পড়ুন-
ভবঘুরে খেরোখাতা: পর্ব এক
ভবঘুরে খেরোখাতা: পর্ব দুই
মনোমোহনের পথে : প্রথম কিস্তি
মনোমোহনের পথে : দ্বিতীয় কিস্তি
মনোমোহনের পথে : তৃতীয় কিস্তি
দয়াময় থেকে দয়ালের দরবারে : কিস্তি এক
দয়াময় থেকে দয়ালের দরবারে : কিস্তি দুই
শাহান শাহ্’র দরবারে : পর্ব এক
শাহান শাহ্’র দরবারে – পর্ব দুই
লোকনাথ বাবার আশ্রম হয়ে মহারাজের আশ্রমে : এক
লোকনাথ বাবার আশ্রম হয়ে মহারাজের আশ্রমে : দুই
লোকনাথ বাবার আশ্রম হয়ে মহারাজের আশ্রমে : তিন
সীতাকুণ্ডের ঝড়ঝড়িতে গড়াগড়ি- এক
সীতাকুণ্ডের ঝড়ঝড়িতে গড়াগড়ি- দুই
সীতাকুণ্ডের ঝড়ঝড়িতে গড়াগড়ি : তিন
সীতাকুণ্ডের ঝড়ঝড়িতে গড়াগড়ি : চার
সীতাকুণ্ডের ঝড়ঝড়িতে গড়াগড়ি : পাঁচ
নিরা গোঁসাইয়ের মতুয়া মহাসম্মেলন- এক
নিরা গোঁসাইয়ের মতুয়া মহাসম্মেলন- দুই
সাঁইজির ধাম হয়ে পাককোলা- এক
সাঁইজির ধাম হয়ে পাককোলা- দুই
টকিমোল্লায় গানে আসর
ফর্সা হাজীতে আরেক দফা
সাঁইজির ধাম হয়ে নহির সাঁইজির হেমাশ্রমে-এক
সাঁইজির ধাম হয়ে নহির সাঁইজির হেমাশ্রমে-দুই
সাঁইজির ধাম হয়ে নহির সাঁইজির হেমাশ্রমে-তিন
সাঁইজির ধাম হয়ে নহির সাঁইজির হেমাশ্রমে-চার
সাঁইজির ধাম হয়ে নহির সাঁইজির হেমাশ্রমে-পাঁচ